নড়াইলে সুলতান পদক’ পেলেন চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারকে সুলতান পদক প্রদান করেন। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নড়াইল-১ ও ২ আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে কবিরুল হক মুক্তি এবং মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ। সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান, নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার), নড়াইলের সিভিল সার্জন মুন্সী মোঃ আসাদুজ্জামান, নড়াইল সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা সেলিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুদ্দীন, নড়াইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইলিয়াস হোসেন (পিপিএম), নড়াইল জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আশিকুর রহমান,। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নড়াইল প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ, মো: ইমরান হোসেন, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যাসহ ক্লাবের সকল সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ সকল কর্মকর্তাবৃন্দসহ। বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার ‘সুলতান স্বর্ণ পদক ২০১৯’ এর জন্য মনোনীত হয়েছেন।
২০০১ সাল থেকে ‘সুলতান পদক’ প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবছর দেশবরেণ্য একজন চিত্রশিল্পীকে এ পদক দেয়া হয়। প্রথমে চিত্রশিল্পী কাইউম চৌধুরী সুলতান পদক লাভ করেন। বিভিন্ন স‚ত্রে জানা যায়, কবি গোলাম মোস্তফা ছেলে মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শ্রীপুর থানার নাকোল গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলক‚পা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে মা জমিলা খাতুন মারা যান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বিজ্ঞানে ভর্তি হন। সেখানে তিনি পড়াশোনা না করে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন। ১৯৬৫ সালে মেরী মনোয়ারের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে ছেলে সাদাত মনোয়ার এবং মেয়ে নন্দিনী মনোয়ার। কর্মজীবন শুরু করেন প‚র্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে।
পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া জনবিভাগ উন্নয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে প্রচারিত শিশু প্রতিভা বিকাশের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান 'নতুন কুঁড়ির' রূপকার তিনি। পুরস্কার ও সম্মাননা : ১৯৫৭ সালে নিখিল ভারত চারু ও কারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রাফিক্স শাখায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, ১৯৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চারুকলা প্রদর্শনীতে তেলচিত্র ও জলরঙ শাখায় শ্রেষ্ঠত্ব, ২০০৪ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক, ১৯৯০ সালে টিভি নাটকের জন্য টেনাশিনাস পদক লাভ, ১৯৯২ সালে চারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে শিশু শিল্পকলা কেন্দ্র কিডস কালচারাল ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম কর্তৃক কিডস সম্মাননা পদক, ২০০২ সালে চিত্রশিল্প, নাট্য নির্দেশক এবং পাপেট নির্মাণে অবদানের জন্য শিশুকেন্দ্র থেকে বিশেষ সম্মাননা লাভসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভ‚ষিত হয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ৩ মার্চ বিকেলে সুলতান ম চত্বরে ১০ দিনব্যাপী সুলতান মেলার উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। মেলায় কুস্তি, ষাঁড়ের লড়াই, দড়ি টানাটানি, ভলিবল প্রতিযোগিতা, আর্চারি, কাবাডি, লাঠিখেলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্রপ্রদর্শনী, আবৃত্তি, নাটক, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধ‚লার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা চলছে। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন ও এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ সুলতান মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ বিভিন্ন পদকে ভ‚ষিত হন। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন এস এম সুলতান। তাকে জন্মভ‚মিতে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।