আজ ১২ মার্চ। নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার এক বছর। ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে ২০১৮ সালের ১২ মার্চ দুপুরে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার সময় দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানটি। দুর্ঘটনায় পাইলট ক্রুসহ মোট ৫১ জন নিহত হন। ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর। আহতদের এখনো তাড়া করে সেই দুর্বিষহ স্মৃতি। এই দুর্ঘটনা বাংলাদেশি প্লেনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা। ওই দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের ২৭ জন, নেপালের ২৩ জন ও চীনের একজন নাগিরকসহ মোট ৫১ জন নিহত হন। আর আহতদের মধ্যে মালদ্বীপের একজন, নেপালের ১০ জন ও বাংলাদেশর ৯ জন। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ছিলেন ওই ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্বে। তার সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ। পাইলট, ক্রু ও যাত্রী মিলে ৫১ নিহত হন।
ওই ঘটনার পর নেপালের তদন্ত কমিটি কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার এ বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলটের ভুল সিদ্ধান্ত এবং আচরণকে দায়ী করে। নেপালের তদন্তে বলা হয়, পাইলট ককপিটে বসে ধূমপান করছিলেন। দুর্ঘটনার আগে ‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত’ অবস্থায় ছিলেন ফ্লাইটে থাকা পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। ঘটনার সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী তিনি ‘সাড়া’ দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নেপাল সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির এ রিপোর্ট শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছেন বাংলাদেশি তদন্তকারী ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন এম রহমতুল্লাহ। তিনি বলেন, এ রিপোর্টে নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের ভুল এবং ব্যর্থতাকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনার আগে বিমানের ক্যাপ্টেন ও বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) মধ্যেকার কথোপকথন হয়। এতে এটিসির গাফিলতি ছিল। পাইলটদের সঙ্গে এটিসি টাওয়ারের ল্যান্ডিংয়ের আগের কথোপকথনে ছিল রানওয়ের কোন দিক থেকে পাইলট ল্যান্ড করবেন। পাইলটদের ভুল বার্তা দেওয়া হয়। এসব তথ্য তাদের তদন্ত রিপোর্টে বিবেচনায় আনা হয়নি।
এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেসটিগেশন গ্রুপ অব বাংলাদেশ (এএআইজি-বিডি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাহ্উদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, ‘নেপালের তদন্ত প্রতিবেদনে যা উঠে এসেছে তা ঠিক আছে। তবে পাইলটকে একপেশেভাবে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু এটিসির যে ত্রুটি ছিল এগুলো উঠে আসেনি। পাইলট ল্যান্ড করতে অ্যাপ্রোচ মিস করেছিলেন। কিন্তু এটিসি পাইলটকে সহায়তা করতে পারত, কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। বরং বিমানটি যখন এটিসি টাওয়ারের কাছ দিয়ে গিয়ে বিধ্বস্ত হয় তখন এটিসি টাওয়ারের কর্মকর্তারা টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন।’ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নিহত ২৫ জন ও নেপালের ৬ জনের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্র পেলে বাকিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে।’
জানা গেছে, বিমার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয়েছে ৩১ জনকে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি নিহত ১৯ জনের পরিবার, আহত ৬ জনের পরিবার ও নেপালের আহত ৬ জনের পরিবার। নিহত যারা হয়েছেন, তাদের পরিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছে প্রায় ৪৩ লাখ টাকারও বেশি। আর আহতরা সেই অর্থের চেয়ে কিছুটা কম অর্থ পেয়েছেন। সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষ থেকে সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ফিরোজ হাসান বিভিন্ন সময়ে এসব চেক হস্তান্তর করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চীন, মালদ্বীপ, নেপাল ও বাংলাদেশের বাকি ৪০ জন নিহত ও আহতদের পরিবারকে এখনো বিমার অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। এ লক্ষ্যে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ এফএম এসোসিয়েটসকে ল ফার্ম হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কিভাবে সেই অর্থ পরিশোধ করা হবে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে অপরদিকে নেপালের নিহত ২৩ জনের পরিবার ও আহত একজনের পরিবার মিলে একটি সমিতি গঠন করে ইন্সুরেন্স ফ্রেম করেছে বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার এক বছর উপলক্ষে বারিধারায় ইউএস-বাংলার কার্যালয়ে বাদ জোহর মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই ‘ফ্লাই ফাস্ট-ফ্লাই সেফ’ শ্লোগান নিয়ে ২টি ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রা শুরু করে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বর্তমানে ৪টি বোয়িং ও ৩টি ড্যাশ ৮-কিউ ৪০০ সহ মোট ৭টি এয়ারক্রাফট রয়েছে ইউএস-বাংলার বহরে। সময়ানুবর্তিতা, নিরাপত্তা নির্দেশনা ও কর্মীদের দক্ষতার কারণে দেশি এয়ারলাইন্সের মধ্যে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছে ইউএস-বাংলা।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।