দেশের কোথাও বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকলেও গ্রীস্মকাল আসতে না আসতেই বরিশালে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে প্রায় ৪৬ হাজার গ্রাহক। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী (ওজোপাডিকো) ডিভিশন-২ এর আওতায় ১২টি ফিডারেই গত এক সপ্তাহ যাবত ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং শুরু হয়েছে। আর এ অবস্থা চলবে পুরো মার্চ মাস জুড়েই বলে জানিয়েছেন ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার। তাছাড়া নানান সমস্যায় জর্জরিত ডিভিশন-২ এর সেবা প্রদানকারী বিদ্যুতের কর্মীরা। যা দীর্ঘদিন ধরে চললেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে গ্রাহক সেবা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সূত্রমতে, চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই ওজোপাডিকো ডিভিশন-২ এর ১২টি ফিডারে তীব্র লোডশেডিং চলছে। ডিভিশন-২ এর ফিডারগুলো হলো নতুনবাজার, বিসিক, কাশিপুর, ডিজিএফআই, কাউনিয়া, সদর হাসপাতাল, পোর্ট রোড, সদর ফিডার, তালতলী, ভাটিখানা, বিএম কলেজ ও আমানতগঞ্জ ফিডার। এ ফিডারগুলোর আওতায় প্রায় ৪৬ হাজার গ্রাহক রয়েছে। জানা যায়, এ ফিডারগুলোতে বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে ২৫ মেঘাওয়াট। প্রয়োজনীয় সাপ্লাই থাকা সত্বেও যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য গ্রাহকরা চলতি মাসের শুরু থেকেই অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন কলকারাখানার শ্রমিকরা। বিদ্যুৎ বিদ্যুত না থাকায় তারা কাজ বন্ধ করে রাখছেন। এছাড়া সংবাদকর্মীরাও পড়ছেন বিপাকে। কোন ধরণেই পূর্ব ঘোষণা কিংবা মাইকিং ছাড়াই গ্রীস্মের শুরুর দিকেই লোডশেডিং শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষ আগামী গ্রীস্মকালে বিদ্যুতের সংযোগ কতটা নিরবিচ্ছিন্ন থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
যতদূর জানা গেছে, বর্তমানে পলাশপুর ফিডার থেকে বাকী ১১টি ফিডারের ১ ঘন্টা আধা ঘন্টা করে বিদ্যুৎ সচল রাখা হচ্ছে। এদিকে ৪৬ হাজার গ্রাহকের সেবা নিয়েও রয়েছে নানান প্রশ্ন। কেননা ১২টি ফিডারে গ্রাহকদের সেবা প্রদানের জন্য মাত্র দুটি টেম্পু রয়েছে। যা মান্ধাতার আমলের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া রাতের বেলায় গ্রাহক সেবা দিতে মাত্র একটি পিকআপ ভ্যান রয়েছে। এ তিনটি পরিবহনের কোনটিরই স্থায়ী কোন চালকও নেই। ফলে গ্রাহকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেবা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে বিদ্যুত কর্মীদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিভিশন-২ এর ১২টি ফিডারের কোনটিতেই স্থায়ী মিটার রিডার ও বিল বিতরণকারী নেই। কন্ট্রাক্টে এসব কাজ করানো হচ্ছে। বিদ্যুত কর্র্মীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গ্রাহক সেবা দিতে হচ্ছে বলেও জানা যায়। হ্যান্ড গ্লোবস, গামবুট, টর্চ লাইটসহ নিরাপত্তার জন্য যে সকল উপকরণ থাকার কথা তা তাদের নেই। সরেজমিনে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। মাঝে মধ্যেই রাতের বেলা দেখা যায়, মোবাইলের লাইট দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মীরা। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সাপ¬াই থাকা সত্বেও গ্রাহকরা এর সুফল ভোগ করতে পারছেনা। আসন্ন গ্রীস্ম মৌসুমে এর মাত্রা আরো বাড়বে বলে আশংকা গ্রাহকদের। সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই ভেঙে পড়ে বরিশালের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
এ ব্যাপারে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন (ওজোপাডিকো) ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমূল্য কুমার সরকার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আগামী গ্রীস্মকালে যাতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেয়া যায় তাই ৩৩ কেভি লাইনে তার পাল্টানো হচ্ছে। মার্চ মাস পুরোটা জুড়েই এ কাজ অব্যাহত থাকবে। আর এ কারণেই লোডশেডিং করা হচ্ছে, বিদ্যুতের চাহিদার কোন ঘাটতি নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটআপ চেঞ্জ করা যায়না, এটা করতে হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। তাছাড়া চালক নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেয়া হয়েছে এ সমস্যা থাকবে না।
কর্মীদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদীর প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদের ঝুঁকি এড়াতে যা যা প্রয়োজন সবই আছে। তবে তারা তা ব্যবহার করতে চায়না। মিটার রিডার ও বিল বিতরণকারী প্রশ্নে তিনি জানান, আগামী আগস্ট মাস নাগাদ প্রি-পেইড মিটার দেয়া হবে তখন আর এদের প্রয়োজন হবেনা। তাই এ পদগুলোতে নিয়োগ হচ্ছেনা। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিলের কাগজে সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের নাম্বার থাকে তাতে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।