চলছে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ১১ই মার্চ ২০১৯ ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
চলছে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে। সোমবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে দীর্ঘ ২৮ বছরের প্রতীক্ষা। নানা জল্পনা কল্পনা শেষে 'দ্বিতীয় পার্লামেন্ট' খ্যাত এ নির্বাচনে ৪৩ হাজার ১৭৩ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবেন। হলে হলে দেখা গেছে ভোটারের দীর্ঘ লাইন। ঐতিহাসিক এই নির্বাচন ঘিরে ব্যানার, পোস্টার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে ঢাবি ক্যাম্পাস, যেন জাতীয় নির্বাচনের আবহ। ব্যালট, সিল, ব্যালট বাক্সসহ যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম আগেই পৌঁছে যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেইসঙ্গে প্রস্তুত হয় নির্বাচনী কেন্দ্র ও ভোটিং বুথগুলো। সব প্রস্তুতি শেষে এখন চলছে ভোট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। ১৮টি হলে ১১৩টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে, এসব ক্যামেরা দিয়ে নির্বাচনের পরিস্থিতি সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ যাতে কেউ নষ্ট করতে না পারে সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন আমরা ভোটের অপেক্ষায় রয়েছি। নিরাপত্তা, ব্যালট, প্রার্থিতা, হল ম্যানেজমেন্ট, বুথ ও কেন্দ্র সব নির্ধারিত হয়েছে। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী, হাউস টিউটর, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, প্রক্টরিয়াল বডি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোবাইল টিম, মোবাইল পুলিশ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছে।

এক নজরে ডাকসু নির্বাচন:
ডাকসু নির্বাচনে কেন্দ্রীয়ভাবে ২৫টি পদে মোট প্রার্থী হয়েছেন ২২৯ জন। আর ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪টি পদে প্রার্থী আছেন ৫০৯ জন। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১ জন। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৪ জন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ১৩ জন নির্বাচন লড়বেন। আর ১২টি প্যানেলের বাইরে ভিপি পদে ৯ জন এবং জিএস পদে ২ জন স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে লড়বেন। নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। তার মধ্যে ৫টি ছাত্রী হলের ভোট ১৬ হাজার ৩১২। ১৮টি হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ছাত্রীদের রোকেয়া হলে, মোট ৪ হাজার ৬০৮ জন।

ডাকসু নির্বাচনে যেসব প্যানেল:
কেন্দ্রীয় ডাকসুতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, প্রগতিশীল বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইশা ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও ছাত্র সমাজ।

ছাত্রলীগ থেকে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

অন্যদিকে, ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস পদে জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম-আহবায়ক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক এবং এজিএস পদে বঙ্গবন্ধু হল শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম সোহেল নির্বাচনে লড়বেন।

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের ১১টি সংগঠন মিলে একটি প্যানেল দিয়েছে। এই প্যানেলে ভিপি প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, জিএস প্রার্থী ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের ফয়সাল মাহমুদ সুমন এবং এজিএস প্রার্থী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক।

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরও জিএস পদে প্রার্থিতায় আছেন।

অন্যদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন- বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নূর, মুহাম্মদ রাশেদ খান জিএস এবং ফারুক হাসান এজিএস পদে লড়ছেন।

ছাত্র মৈত্রীর প্যানেলে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাসেল শেখ ভিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সনম সিদ্দিকী শিতি জিএস এবং আরেক সহ-সভাপতি সানজীদা বারী এজিএস প্রার্থী হয়েছেন।

জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে রাকিবুল ইসলাম তুষার ভিপি, শাফিকা রহমান শৈলীকে জিএস, জহুরুল ইসলাম এজিএস প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন লড়ছেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশের ছাত্রলীগ-বিসিএলের প্যানেলে নাঈম হাসান ভিপি, শাহরিয়ার রহমান বিজয় জিএস এবং আশরাফুল আলম ফাহিম এজিএস প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন।

ফিরে দেখা বিগত সময়ের ডাকসু নির্বাচন:
সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২৮ বছর আগে ১৯৯০ সালে। এরপর কয়েক দফায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। যে কারণে সোমবারের এই নির্বাচনকে ঘিরে অফুরন্ত উৎসাহ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষকসহ দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে।

১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ডাকসুতে আর কখনও জয় পায়নি। ১৯৭২-৭৯ সময়কালে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে দায়িত্ব পালন করেন ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান।

১৯৭৩ সালের নির্বাচন ভণ্ডল হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল। প্রথম ২ নির্বাচনে যথাক্রমে জাসদ-ছাত্রলীগের এবং বাসদ-ছাত্রলীগের প্রার্থী হয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জিতেছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না ও আখতারুজ্জামান।

১৯২২ সালে ডাকসু সৃষ্টি হওয়ার পর বিগত ৯৬ বছরে ডাকসুর ইতিহাসে পরপর দুটি মেয়াদে লাগাতার ডাকসুর ভিপি এবং জিএস পদে নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না এবং আখতারুজ্জামান। যে দুটি মেয়াদে তারা নির্বাচিত হন সে দুটি মেয়াদ ছিল (১) ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এবং ১৯৮১-৮২।

১৯৮২ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৮৯ পর্যন্ত ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন আখতারুজ্জামান ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ১৯৮৯-৯০ সেশনে দায়িত্ব পালন করেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ এবং মুশতাক আহমেদ।

১৯৯০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৯৯০-৯১ সেশনের জন্য ভিপি ও জিএস পদে যথাক্রমে নির্বাচিত হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। এরপর আর ডাকসু নির্বাচন হয়নি।

ইনিউজ ৭১/এম.আর