ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নেওয়া কঠোর আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি তাদের নাম-পরিচয়, চেহারা ভালোভাবে প্রচার করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, প্রায়ই দেখি শিশু ধর্ষণ, নারী ধর্ষণ, এটা অত্যন্ত গর্হিত একটা কাজ। যারা এসব করে তারা সমাজের শত্রু, তাদের প্রতি ঘৃণা। শনিবার (০৯ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখে ‘জয়িতা’ পদকপ্রাপ্তদের হাতে সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে আরো বেশি সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলবো যারা এ ধরনের কাজ করে তাদের নাম-দাম, চেহারা ভালোভাবে প্রচার করা। নির্যাতিত নারীদের নয়, যে ধর্ষক তার পরিচয়, চেহারা এমনভাবে প্রচার করা যাতে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যেন তাকে ঘৃণার চোখে দেখে এবং এই ভাবে তাকে সমাজের বাইরে করে দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আইনগত ব্যবস্থা তো তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হবেই। আপনারা জানেন ইতোমধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারপরও এর বিরুদ্ধে আরো বেশি সচেতনতা ও জনমত সৃষ্টি করা দরকার।
নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করতে সামাজিক সচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে শুধু আইন করলে সহিংসতা বা বৈষম্য দূর হবে না। এজন্য সমাজে সচেতনা সৃষ্টি করা একান্তভাবে দরকার। এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার, মা-বোনেরা যারা আছেন- নারী পুরুষ সবাই এক হয়ে কাজ করতে হবে।
কন্যা শিশুরা যেন কখনো বৈষম্যের শিকার না হয় এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কন্যা শিশুরা যেন কখনো বৈষম্যের শিকার না হয়। সেই সচেতনতা ইতোমধ্যে আমাদের সমাজে এসে গেছে। এটা আরো ভালোভাবে প্রচার দরকার। সমাজ গঠনে নারী-পুরুষের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজকে গড়ে তুলতে হলে নারী-পুরুষ সবারই এক সঙ্গে কাজ করা দরকার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছে- বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। তিনি বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে একটা সমাজকে যদি গড়ে তুলতে হয়, সেই সমাজের অর্ধেক যেখানে নারী, তাদের বাদ রেখে একটা সমাজ কখনো গড়ে উঠতে পারে না।
সরকার কঠোর শাস্তির বিধান রেখে ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ও ডিএনএ আইন-২০১৪, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এবং যৌতুক নিরোধ আইন- ২০১৮ প্রণয়ন, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ এর সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০৩ (সংশোধিত) ও পারিবারিক পর্যায়ে সংঘটিত নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে ৬৭টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন ১০৯ চালু, অসহায় নির্যাতিত মহিলাদের দ্রুত ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ৬টি বিভাগে রয়েছে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল ও মহিলা সহায়তা কর্মসূচি, গাজীপুর জেলায় মহিলা, শিশু ও কিশোরী হেফাজতিদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা, সারা দেশে ৪ হাজার ৮৮৩টি ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা গ্রহণ, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ‘অ্যাকসেলারেটিং একশন টু অ্যান্ড চাইল্ড ম্যারেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং পারিবারিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা প্রদানে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষা, খেলাধুলা, পেশাগত কাজ, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশি নারীদের সফলতার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।