কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চিকেনপক্স (গুটি বসন্ত) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ছোঁয়াছে রোগ হওয়ায় ঘনবসতির কারণে দ্রুত ছড়াচ্ছে এ রোগটি। গত আড়াই মাসে ২২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে এসেছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আবদুল মতিন। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন শতাধিক শিশু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার স্বাস্থ্যকর্মীরা। এ কারণে রোগটি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গুটি বসন্তের খবর ক্যাম্প ছাড়িয়ে বাইরে প্রচার পাওয়ার পর স্থানীয়দের মাঝেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে কিছু নির্দেশনা মেনে চলতে এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ছোঁয়াছে হলেও এ রোগ মরণঘাতি নয় বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, এ রোগে আক্রান্ত রোগী অসুস্থ থাকে এক সপ্তাহ বা সর্বোচ্চ ১৫ দিন। এ সময়ের পর চিকিৎসা সেবা নিক বা না নিক রোগী ভালো হয়ে যায়। তবে এ সময় শরীরে ব্যাথা হয়ে মুখে অরুচি চলে আসে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ শুরু করেছি আমরা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে হঠাৎ করে ছোঁয়াছে এ রোগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন ক্যাম্পের চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রেগুলোতে প্রতিদিন কয়েকশ রোহিঙ্গা এ রোগের সেবা নিতে আসে। তাদের বেশিরভাগই শিশু। তারা বলেন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, অনিরাপদ পানি পান এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকায় ক্যাম্পে এ রোগ দেখা দিয়েছে। পরিবারের কোনো এক সদস্যের এ রোগ দেখা দিলে অন্যন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া ঘনবসতি হওয়ায় পানি ও বাতাসের মাধ্যমে সহজেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গারা স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তেমন একটা সচেতন নয় দাবি করে তারা আরও বলেন, অজ্ঞতার কারণে সেবা নিতে আসা শিশুর অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আমরা এ রোগ সম্পর্কে তাদের সচেতন করতে চেষ্টা করছি। তবে অনেক রোহিঙ্গাকে সচেতন করা গেলেও অনেকে আবার তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। এছাড়া ক্যাম্পে রোগাক্রান্ত শিশুরা সহজে একে অন্যের সঙ্গে মেলামেশার কারণেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত ২২ হাজার রোহিঙ্গা নারী ও শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। আক্রান্তদের সিংহভাগ শিশু। যাদের বয়স ৭-১২ বছরের মধ্যে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো শিশুর মৃত্যু ঘটেনি। এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়া এ রোগে স্থানীয়দের মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ায় স্থানীয়দের মাঝে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই রোহিঙ্গারা যেন ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। উখিয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আবদুল মন্নান জানান, এ রোগ আমাদের দেশে বসন্ত ঋতুতে হয়ে থাকে বলে একে বসন্ত রোগ বলা হয়। এ রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। ওষুধ খেলেও ভালো হতে এক সপ্তাহ সময় লাগে না খেলেও এক সপ্তাহ সময় লাগে। প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ জন রোগী সেবা নিতে হাসপাতালে আসে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।