বাংলাদেশে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় সৌদি আরব। যার অংক বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। মূলত তেলনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে দেশটি এ পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা গেছে।বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সৌদির প্রতিনিধি দলের সংলাপ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপ শেষে মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় দেশটির এ বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়াও বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
সংলাপে ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, সৌদি আরবের দুই মন্ত্রীসহ ৩৪ সদস্যের প্রতিনিধি।বৈঠকে সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী আল কাসাবি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘এশিয়ান টাইগার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়টি ‘গুরুত্বের’ সঙ্গে দেখছে।তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এ দেশে এসেছি কাজের বিভিন্ন দিক খুঁজে বের করতে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে।’দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে ‘সৌদি-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ গঠনের আগ্রহও প্রকাশ করে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের রিয়াদে আমন্ত্রণ জানান মাজিদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাসাবি।
‘আমি আপনাদেরকে বলতে চাই- এর মাধ্যমে সৌদি-বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হলো,’ যোগ করেন সফররত সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী।অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাতির পিতার হাত ধরেই সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফর করেছিলেন। তার ফল আসতে শুরু করেছে। দুই দেশের মধ্যে সব সম্পর্ক আরও গভীর হবে।দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ গত ১০ বছরে ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সমর্থ হয়েছে। চলতি বছরে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আমরা আগামী বছর ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রত্যাশা করছি। ভৌগোলিক অবস্থান এদেশকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের রয়েছে প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতায় সহজে প্রশিক্ষণযোগ্য নিবেদিতপ্রাণ জনশক্তি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে স্বল্প ব্যয় এবং আমাদের বৃহৎ শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজারে প্রবেশ সুবিধাও আছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে।দেশের জনশক্তির বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ১৬৩ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই কর্মক্ষম। এই কর্মক্ষম মানুষদের আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে নানা উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। বিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন এবং তথ্যপ্রযুক্তি, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধশিল্প, জাহাজ নির্মাণ এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণের মতো খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারবে সৌদি আরব।সংলাপে আলাদা বক্তব্যে উঠে আসে, সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে। তারা বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, উড়োজাহাজকে গুরুত্ব দিয়ে ১৬ প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে।বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সৌদি আরব ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।