ভোটার হব, ভোট দেব’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ১ মার্চ (শুক্রবার) প্রথমবারের মতো ভোটার দিবস উদযাপন করবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (বিইসি)। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা সভায় ওইদিন উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভোটার দিবস উদযাপনের বিষয়ে সংস্থাটির যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ১ মার্চ বিকেল ৪টায় নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে কেন্দ্রীয় আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি। আর বিশেষ অতিথি থাকবেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
ভোটার দিবসে সারাদেশেই জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে নানা কর্মসূচি সকাল থেকে পালন করা হবে। উপজেলা-জেলা থেকে সব পর্যায়েই সকালেই থাকবে র্যালি।ঢাকায় সকাল ৯টায় র্যালি শুরু হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে আগারওগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এসে এটি শেষ হবে।ইতিমধ্যে দিবসটি সফল করতে কেন্দ্র, বিভাগ, অঞ্চল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পাঁচটি কমিটি গঠন করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাচন কমিশন সচিবকে সভাপতি ও একজন উপ-সচিবকে সদস্য সচিব করে ২৮ সদস্যের কমিটি কাজ করবে।বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে ২৭ সদস্যের কমিটি বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করবে। আঞ্চলিক পর্যায়ে কাজ করবে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা সভাপতিত্বে ২৪ সদস্যের কমিটি। জেলায় কাজ করবে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ৩০ সদস্যের কমিটি। আর ২৫ সদসদ্যের কমিটি উপজেলা চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে উপজেলা পর্যায়ে কাজ করবে।
কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও অন্য চার কমিটি দিবসটি উদযাপনে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন, ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট ইত্যাদি প্রদর্শন, র্যালি আয়োজন, উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, গণসচেতনতা সৃষ্টিতে মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় উপসনালয়কে সম্পৃক্তকরণ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্তকরণ ইত্যাদি রয়েছে কমিটিগুলোর কার্যপরিধির মধ্যে।আর কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় সব দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করবে।ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভারতে ২০১১ সালে প্রথম যখন ভোটার দিবস পালন করে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। সেবছর ৫২ লাখ তরুণকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়। এছাড়া সব মিলিয়ে অন্তর্ভূক্ত করা হয় প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ নতুন ভোটার।
আমাদের দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হলেও অনেকে বাদ পড়েন। ফলে বছরব্যাপী এ কার্যক্রম চলতেই থাকে। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত ঝামেলা তো রয়েছেই। কেবল একটু সচেতন হলেই এ সমস্যাটি থাকে না। তাই ভোটার দিবস এদেশেও তরুণদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করবে।এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, সারাদেশেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটি উদযাপন করা হবে। মূলত, জনসাধারণের মধ্যে ভোটার হওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিই এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য। এ কার্যক্রমের সঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়টি সম্পৃক্ত রাখা হবে।ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমভাবে আগামীকাল (শুক্রবার) জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আমরা এটা পালন করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। এবং কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা নির্বাচন কমিশনেও দিবস পালনের জন্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার থেকে শুরু করবো। এদিন আমরা নতুন ৬ জন ভোটারকে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করবো। তবে পুরো মার্চ মাস জুড়ে উপজেলা নির্বাচনের জন্য এপ্রিল মাস থেকে বিভিন্ন এলাকায় এ হালনাগাদের কাজ শুরু হবে। ভোটার দিবস: নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মার্চ মাসটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি রচিত হয় এবং দেশপ্রেমিক শহীদদের আত্মদানের বিনিময়ে জাতীয় জীবনে একটি গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হয়। শহীদের রক্তে রাঙানো মাসটি মুক্তিযুদ্ধের সূচনার জন্য গৌরবময় ও পবিত্রতম হওয়ায় ১ মার্চ তারিখকে জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।জাতীয় ভোটার দিবস: গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোটাধিকার বিষয়ে সাধারণ জনসাধারণ ও তরুণদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর জাতীয় ভোটার দিবস উদযাপনের গুরুত্ব রয়েছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে বিশেষ করে সার্কভুক্ত দেশ এবং ফেমবোসার প্রতিনিধিত্বকারী দেশ হিসেবে জাতীয়ভাবে ভোটার দিবস উদযাপনের জন্য বর্তমান কমিশন দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।সে পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১ মার্চ তারিখকে জাতীয় ভোটার দিবস ঘোষণা করেছে এবং ওই তারিখকে জাতীয় ভোটার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কমিশন। সরকার ১ মার্চ কে জাতীয় ভোটার দিবস ঘোষণা করেছে এবং ওই তারিখকে জাতীয় ভোটার দিবস হিসেবে উদযাপনের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত পরিপত্রের “খ” শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তুর্ভুক্তকরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে (পতাকা-ক)। এজন্য দিবসটি মূলত গণসচেতনতা ও প্রচারণামূলক হওয়ায় সাধারণ জনগণসহ তরুণ ভোটারদের মধ্যে আগ্রহ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে সবাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিবস।
২০১৩ সালে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নির্বাচন বিষয়ক সংগঠন ফেমবোসা'র চতুর্থ সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে সদস্য দেশগুলো জাতীয়ভাবে ভোটার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ভোটার দিবস উদযাপনের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিষয়টি কমিশন সভায় উপস্থাপন করলে নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন। বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হলে তা প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিলের সভায় সরকারের অনুমোদন লাভ করে।সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রতিবছর ০১ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস পালিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।