সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধান করে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম সংসদে জানতে চেয়েছেন, ‘আব্দুর রহমান বদিকে (কক্সবাজার থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য) দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ আর শাহজাহান খানকে দিয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব?’ জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখানে ব্যক্তি বিষয় নয়। একজনই পুরো রিপোর্টটি প্রণয়ন করবেন না। তিনি যেহেতু অভিজ্ঞ মানুষ সেজন্য তার নামটি এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে যতটা না আশা করা হচ্ছে তার থেকে ভালো রিপোর্টও তো আসতে পারে।’ সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নে এ আলোচনা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ফখরুল ইমাম বলেন, গরু-ছাগল চিনলে লাইসেন্স দেওয়া যাবে শাজাহান খানের এই মন্তব্যে সারা দেশে তোলপাড় হয়েছিল। ওনার এক হাসি ওই সময় দেশে কী পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তাকে দিয়ে সরকারের কতখানি কমিটমেন্ট রক্ষা হবে।’ জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সম্প্রতি দেশে দুর্ঘটনাজনিত পরিস্থিতির কিছু অবনতি ঘটায় আমরা জরুরিভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা ডেকেছিলাম। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী, পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতা, ইলিয়াস কাঞ্চন, সৈয়দ আবুল মকসুদসহ সড়ক বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন, ছিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পুলিশের কর্তাব্যক্তি।
তিনি বলেন, ‘সভায় সকলের উপস্থিতিতে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি সুপারিশমালা তৈরির জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয় যাতে শাজাহান খানের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত কেউ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি। তার (শাজাহান খান) নেতৃত্বে আরও ১৪ জন এই কমিটিতে রয়েছেন। আমরা এখানে ব্যক্তি দেখবো না। অতীতে তার কোনও স্মিত হাসির জন্য কোনও সমস্যার উদ্ভব হয়েছে কিনা তা দেখতে চাইবো না। এই কমিটি সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ও সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে রিপোর্ট কীভাবে পেশ করে তা দেখবো। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবো।’ অভিজ্ঞ মানুষ হিসেবে শাহজাহান খানকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ কমিটির প্রধান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শাজাহান খানকে প্রধান করার সময় উপস্থিত কারও কোনও বিরোধিতা আসেনি। এখানে তার কোনও হাসির জন্য কী সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে সেটা দেখবো না। এখানে ব্যক্তি বিষয় না, দেখা হবে তারা সড়কে শৃঙ্খলা আনতে কী সুপারিশ তৈরি করেন, পেশ করেন। তার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে। আর এখানে যতটা না আশা করা হচ্ছে তার থেকেও ভালো রিপোর্ট তো আসতে পারে।’ অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভিআইপি হয়ে উল্টোপথে চলি। এটা তো স্বাভাবিক বিষয় নয়। ভিআইপিরা অসাধারণ মানুষ, তারা যদি উল্টোপথে চলেন তাহলে সাধারণ মানুষ কী করবেন?
সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়টি সব থেকে দুর্ভাবনার মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, কেবল ডিভাইডার দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব নয়। পাশে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও দেখা যায় মানুষ লাফিয়ে ডিভাইডার দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। সড়কে সব থেকে জরুরি হচ্ছে শৃঙ্খলা রক্ষা করা, কিন্তু কেউ এটা মানতে চান না। মোবাইল কানে দিয়ে মধুর স্বরে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হন আর বাস চাপা দিয়ে চলে যায়। রাজশাহী-৩ আসনের আয়েন উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশে সড়ক পরিবহনের আওতায় রাস্তার পরিমাণ ২১ হাজার ৫৯৫ দশমিক ৪৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক তিন হাজার ৯০৬ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক চার হাজার ৪৮২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার ও জেলা সড়ক ১৩ হাজার ২০৬ দশমিক ৯২ কিলোমিটার। মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী, সড়ক বিভাগের সব থেকে বেশি রাস্তা রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭৭ দশমিক ৫২ কিলোমিটার এবং সব থেকে কম মেহেরপুর জেলায় ১২৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। চট্টগ্রাম-১১ আসনের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে পরিবারপ্রতি গাড়ির সংখ্যা নির্ধারণের বিধান রাখা হয়েছে। সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে কোনও ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান বা কোনও এলাকার জন্য মোটরযান রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা বা সীমা নির্ধারণ করতে পারবে সরকার। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মেট্রোরেল বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস রুট ফ্রাঞ্চাইজি পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনাও শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে। এগুলো হলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার অনেক কমে আসবে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।