নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আবুধাবি সফরের প্রথম দিনে দুই দেশের মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সমঝোতা স্মারক সই ছাড়াও ব্যবসা-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের মধ্যে দিয়ে আবুধাবি ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগের নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে আবুধাবিতে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে স্থানীয় সময় বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থমন্ত্রী সুলতান আল মানসুরীর উপস্থিতে এ চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
পরে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ ইমরান। আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অনুষ্ঠান স্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান প্রদর্শনী সেন্টারে ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম পাশাপাশি বসে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। সেখানে সন্ত্রাস, নিরাপত্তাসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলাপ করেন দুই প্রধানমন্ত্রী।
আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নেভাল ডিফেন্স অ্যান্ড মেরিটাই সিকিউরিটি প্রদর্শনী (এনএভিডিইএক্স) নৌবাহিনী প্রদর্শনীতেও অংশ নেন। নৌ-বাহিনীর এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ জাহাজ বিএনএস ধলেশ্বরী রয়েছে। চারটি সমঝোতা স্মারকের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে বিনিয়োগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে সই করেন- বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, দুবাই রয়েল পরিবারের সদস্য শেখ আহমেদ ডালমুক আল মাকতুম।মাতাবাড়িতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি বিষয়ক সমঝোতা স্মারকে সই করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও দুবাই রয়েল পরিবারের সদস্য শেখ আহমেদ ডালমুক আল মাকতুম।
বন্দর উন্নয়ন, মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রেল, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, পর্যটনসহ আরও কয়েকটি সেক্টর সহযোগিতায় বাংলাদেশের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটি ও দুবাই সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারকে সই করেন শিপিং মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ ও ডিপি ওয়ার্ল্ডয়ের চেয়ারম্যান সুলতান আহমদ বিন সোলাইয়েম। এ্যামিরাত ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (ইএনওসি) সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেন বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ইএনওসি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ আল ফালাসি। পরে সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল স্টেরেজিস এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থমন্ত্রী সুলতান আল মানসুরী নেতৃত্বে প্রথম সারির ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের ১৫ সদস্যদের প্রতিনিধি দল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অর্থমন্ত্রী সুলতান আল মানসুরীর নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের কথা তুলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশে তারা নতুনভাবে ব্যবসা বাড়াতে চান। বিশেষ করে বিনিয়োগ করতে চান। সেটা হলো এনার্জি, পোর্ট, আর হলো ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ইউএই একটা যৌথ বিজনেস ফোরাম করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি বলেন, আমাদের এখন জয়েন্ট কমিশন আছে, কিন্তু জয়েন্ট ইকোনোমিক কমিশন নেই, সেটাও করবে। এটা থাকলে নিয়মিত আলোচনা হতে পারে। বৈঠকে আরও জোরালো ও নতুন ধরনের ইকোনোমিক পার্টনারশিপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন ইউএই’র অর্থমন্ত্রী। সাক্ষাতের সময় উপস্থিত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বন্দর পরিচলানকারী সংস্থা ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান আহমদ বিন সোলাইয়েম।
ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে শুধু বন্দরই করে না তারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কও করেন। একটা বড় ধরনের বিনিয়োগের চিন্তা-ভাবনা করছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আসেন, যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা সেটা দেবো।’ এলএনজি এবং ল্যান্ড বেইজ এলএনজির বড় একটা বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে আশা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। তিনি বলেন, ৮০০ থেকে ১০০০ এলএনজি বেইজড বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি পর্যায়ে, ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্রজেক্ট করতে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
শেখ আহমেদ ডালমুক আল মাকতুমও এনার্জি ও অন্যান্য খাতে তারা বাংলাদেশে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ রয়েছে। রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ ইমরান বলেন, আবুধাবি সরকার অতীতের চেয়ে বর্তমানের অনেক বেশি আন্তরিক। এতদিন আমরা এগিয়ে গেছে। এখন মনে হচ্ছে বিনিয়োগ করার জন্য তারা এগিয়ে আসছে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যে বাংলাদেশ ও আবুধাবি মধ্যে সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগ ও ব্যবসার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ ইমরান। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহেমদ ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ। সফরকালীন বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শেষে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।