সৌদি আরবের বাসাবাড়িতে প্রায় এক লাখ দক্ষ চালকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। সে লক্ষ্যে দেশের ৬১টি জেলার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জানা যায়, সৌদি আরবে একজন চালক মাসে ১ হাজার ৩৫০ রিয়াল বেতন পাবেন। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩০ হাজার টাকার (১ রিয়াল সমান ২২.৩৯ টাকা) কিছু বেশি। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। প্রশিক্ষণ শতভাগ ফ্রি, উল্টো প্রশিক্ষণ নিতে এলে দৈনিক ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। ‘দেশ-বিদেশ কর্মসংস্থানের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রদান’ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের জুলাই থেকে দেশের ৬১টি জেলায় এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে। গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় এ প্রশিক্ষণ হবে না। তবে এসব জেলার মানুষ নিকটস্থ জেলায় প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। এ সময়ের মধ্যে ৬১টি জেলা থেকে পর্যায়ক্রমে দক্ষ চালক সৌদি আরবে পাঠাবে সরকার। এজন্য ১৪১ কোটি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পের বিষয়ে জানা যায়, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে জেলায় প্রতি শিফটে ২০ জনকে নির্বাচিত করা হবে। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ নিতে কোনো ধরনের টাকা-পয়সা নেওয়া হবে না। উল্টো ড্রাইভিং শিখতে এলে দৈনিক ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। কোনো খরচ ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হবে। বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ) থেকে কোনো ধরনের পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনে পড়বে না। সরাসরি সৌদি আরবের কোম্পানি পরীক্ষা নেবে। এ বিষয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিচালক ড. মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দেশের জনসম্পদ কাজে লাগাতেই প্রকল্পটি নেওয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সারাদেশে এক লাখ দক্ষ চালক তৈরি করে সৌদি আরবে পাঠানো হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে কোনো ধররের অর্থের প্রয়োজন হবে না। প্রশিক্ষণ শতভাগ ফ্রি, উল্টো দৈনিক ১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। আমাদের এখানে অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে আসবে। তবে আমরা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষক নির্বাচিত করবো।’
একজন চালকের সেখানে যেতে কি পরিমাণ অর্থ খরচ হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারিভাবে যাবেন চালকেরা, এখানে দালাল থাকবে না। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া থেকে শুরু করে সৌদি আরব পর্যন্ত আমরাই পৌঁছে দেবো। কি পরিমাণ অর্থ খরচ হবে তা নির্ভর করবে সৌদি আরবের কোম্পানিগুলোর উপর। প্রকল্প শুরুর পর দক্ষ চালক বিদেশ যাওয়া শুরু করলে খরচের সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে। তবে সরকারিভাবে খুব বেশি টাকা খরচ হবে না বলে মনে করি।’ তিনি আরো বলেন, শুধু প্রশিক্ষণ নয়, প্রকল্পের আওতায় ছোটখাটো মেরামত কাজও শেখানো হবে। এছাড়াও ইংরেজি ও আরবি ভাষা শেখানো হবে বিনামূল্যে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র জানায়, সৌদি আরবে এক লাখ দক্ষ চালকের কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে মর্মে সৌদি আরবে বাংলাদেশি দূতাবাসে জানানো হয়েছে। এসব চালকদের পরীক্ষা ও লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সৌদি আরবের দাল্লাহ আল বাকারা কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চলছে। এই কোম্পানি বাংলাদেশি চালকদের প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষা নেবে এবং লাইসেন্স দেবে। সৌদি আরবে এই কোম্পানি ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। এই লাইসেন্স প্রাপ্তিতে এসব চালকেরা পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী তেলসমৃদ্ধ জিসিসিভুক্ত (গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল) দেশে ড্রাইভিং পেশায় কাজ করতে পারবেন। জিসিসিভুক্ত দেশগুলো হলো- কাতার, বাহরাইন, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কুয়েত।
প্রশিক্ষণের আওতায় একজনকে তিন মাসে ৩৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলায় দু’টি প্রশিক্ষণ গাড়ির মাধ্যমে ২০ জন করে দুই শিফটে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এজন্য ৬১টি জেলায় ১২৮টি প্রশিক্ষণ গাড়ি ক্রয় করা হবে। বছরে মোট চারটি ব্যচ হবে। ৫ বছরে ৬১টি জেলায় ১ লাখ ২ হাজার ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এদের মধ্যে দক্ষরাই সৌদি আরবে যেতে পারবেন। আর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ১৯২টি ইন্সট্রাক্টর ও ৬৪ জন স্কিল ওয়ার্কার নিয়োগ দেবে সরকার।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।