যৌন হয়রানির দায়ে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্বপদে ফিরতে মরিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ হাবিবুল্লাহ মিঠূ, উপজেলা প্রতিনিধি নেছারবাদ- পিরোজপুর
প্রকাশিত: শনিবার ৯ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৫ অপরাহ্ন
যৌন হয়রানির দায়ে বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক স্বপদে ফিরতে মরিয়া

নেছারাবাদের ধলহার পঞ্চগ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে চাকুরীচ্যুৎ হওয়া প্রধান শিক্ষক বিধান মিস্ত্রি স্ব-পদে ফিরতে বিভিন্ন মহলে তদবির চালাচ্ছেন। এজন্য তিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগের সুবিধাভোগী একটি চক্রকে ম্যানেজ করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উপর এক প্রকার অঘোষিত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় আবারো ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শিক্ষক বিধান কোনক্রমে ওই বিদ্যালয়ে ফিরে আসলে ভেঙ্গে পড়বে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যবস্থা। একইসাথে লম্পট বিধানের জন্য ছাত্রী শূণ্যতায় ভুগতে পারে প্রতন্ত্য গ্রামের একমাত্র ওই বিদ্যালয়টি। এমনটি মনে করছেন গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা সহ অভিভাবকবৃন্দ। বিদ্যালয়ের সাবেক ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, লম্পট শিক্ষক বিধান ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিজের কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করে নানা কায়দায় যৌন হয়রানি করতেন। ভয় ও লজ্জায় ওইসব ছাত্রীরা পরিবারের কারো কাছে কিছু বলত না। ক্রমেই বিধানের ওইসব পৈচাসিক আচরনে লেখাপড়ায় অনীহা হয়ে উঠছিল বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রীর। এক পর্যায় বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সাথে লম্পট বিধানের অশালীন কথপকথোনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। এরপরে আরো একাধিক ছাত্রীর সাথে শিক্ষক বিধানের শ্লীতাহানির ঘটনা সহ নানান অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লম্পট প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ বিচার দাবি করে তৎকালিন পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টির তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নেছারাবাদের ইউএনওকে নির্দেশ দেন। বিষয়টির ব্যপারে সে সময়ের উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুদ্দীন ওয়ালিদ এবং ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি পৃথক পৃথক তদন্ত করেন। তাতে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ বিধান মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত হয়। এতেও শিক্ষক বিধান আপত্তি জানালে পূনরায় স্বরূপকাঠি সরকারি কলেজের প্রফেসর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ঘটনার তদন্ত করেন। তার প্রতিবেদনেও ঘটনার সত্যতা প্রমানিত হয়। তারপর ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রধান শিক্ষক বিধানকে বিদ্যালয় থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করেন। চাকুরূচ্যুৎ হওয়ার পরে  বিধান সে সময় থেকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ধরনা দিয়ে আসছেন।  সম্প্রতি নতুন করে স্থানীয় সরকার দলীয় একটি সুবিধাবাদি কয়েকজনকে ম্যানেজ করে ভাগে আনতে সক্ষম হন। ওই সুবিধাবাদি চক্র দিয়ে বিদ্যালয়ে বিধানের বিরধিতাকারীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাকরি ফিরে পেতে এবার রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে নানা তদবিরে চালাচ্ছেন।

কুড়িয়ানা আর্য সমিম্মলনি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারায়ন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান মিস্ত্রি নবম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখার এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর ফাঁকে একাধিকবার যৌন হয়রানি করেছেন এ সম্পর্কে ওই শিক্ষকের একটি অডিও রেকর্ড শোনা গেছে। একপর্যায়ে মোবাইল ফোনেও ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করলে বিষয়টি এলাকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা প্রধান শিক্ষককে ঘটনার বিষয় জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রধান শিক্ষক আত্মগোপনে চলে যান। এ বিষয়ে বিধান মিস্ত্রি বলেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকাড়। বিষয়টি সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মো. শাহ্ আলম স্যারকে জানানোর পরে তিনি এর সমাধানের জন্য তাপস মজুমদার. জহিরুল ইসলাম, শঙ্কর হালদার, বাবুল চন্দ্র, দীলিপ সিকাদার ও মিলন পাইকসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের ছয় সদস্যকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা সবকিছু দেখভাল করছেন।

ইনিউজ ৭১/এম.আর