নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর জাল করা প্রবেশপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহন

নিজস্ব প্রতিবেদক
এফ এম নাজমুল রিপন
প্রকাশিত: শনিবার ২রা ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:১৭ অপরাহ্ন
 নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর জাল করা প্রবেশপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহন

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর জাল করে তৈরী করা প্রবেশপত্রের মাধ্যমে আগৈলঝাড়ায় এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস অভিযুক্ত ওই পরীক্ষার্থী ও তার অভিভাবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিষয়টি বরিশাল শিক্ষা বোডের্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসককে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শনিবারই পত্র পেরণ করেছেন। বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম বলেছেন, নির্বাহী কর্মকর্তার রিপোর্ট পেলেই অসাধু ওই চক্রটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তিনি। 

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাকাল নিরঞ্জন বৈরাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই গ্রামের দীনেশ দাস ও  সবিতা রানী দাসের ছেলে সুব্রত দাস টেষ্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অনলাইনে সুব্রতর ফরম পুরন করতে পারেনি। কিন্তু সুব্রত ফরম পুরণ না করলেও একটি বোর্ডের একটি চক্রের মাধ্যমে ওই বিদ্যালয়ের প্যাড, প্রধান শিক্ষক পুলিন বিহারী জয়ধরের স্বাক্ষর ও সীল জাঁলিয়াতি করে স্কুলকে ফরম পুরণের অনুমতি প্রদানের কাগজপত্র সংশ্লিষ্ঠ স্কুলে গিয়ে প্রদর্শন করে। প্রধান শিক্ষকের জাঁল কাগজপত্র দেখে সন্দেহ হলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা বোর্ডকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাসও পৃথকভাবে শিক্ষা বোর্ড ও থানাকে লিখিতভাবে জাঁলিয়াতির বিষয়টি জানান তিনি। এ ঘটনার পরে বোর্ড পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম শিক্ষার্থী সুব্রত দাসের প্রবেশপত্র বাতিল করার নির্দেশ দিলেও অসাধু ওই চক্রের হাত ধরে সুব্রতর নামে কর্মকর্তাদের নামের সীল ও স্বাক্ষর জাল করে ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে প্রবেশপত্র ইস্যু হয়। যার প্রবেশপত্র সিরিয়াল নং-১৯০৩৩০১০। রোল নং-৯০০৬৯১, রেজিষ্ট্রেশন নং-১৬১৫৪৪৫৭০৩। 

প্রবেশপত্র জাঁলিয়াতির বিষয়টি প্রধান শিক্ষক পুলিণ বিহারী জযধর বোর্ডকে জানালে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম বিষয়টি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির প্রধান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাসকে ফোনে অবহিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেন। বোর্ডের নির্দেশ পেয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা পরীক্ষার প্রথম দিন শনিবার শ্রীমতি মাতৃ মঙ্গল বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে প্রবেশপত্র যাচাই বাছাই করে পরীক্ষার্থী সুব্রত দাসের সাথে কথা বলেন। সুব্রত জানায়, টেষ্ট পরীক্ষায় সে ফেল করেছিল।  জঁাঁলিয়াতির বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। প্রবেশপত্র সহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র সম্পর্কে তার মা সবিতা দাস জানেন। তাৎক্ষনিক ভাবে সবিতাকে সেখানে হাজির করলে সবিতা ঘটনার সাথে জড়িত বোর্ডের কর্মচারী ফরিদ ও ভোলার লাল মোহন স্কুলের শিক্ষক মমিন উদ্দিন তার ছেলের ফরম পুরন ও প্রবেশপত্র দেয়ার ব্যবস্থা করেন।

প্রসংগত, উপজেলা ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর মানবিক বিভাগের দুই শিক্ষার্থী রাব্বানী সরদার ও আকাশ সরকারের জন্য একই উপায়ে ফরম পুরনসহ প্রবেশপত্র তৈরী করা হয়। ওই দুই শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে তাদের কাছ থেকে সবিতা রানী দাস টাকা নিয়ে তাদের জন্য পরীক্ষা দেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে শনিবার ওই দুই শিক্ষার্থী বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস জানান, তিন শিক্ষার্থীর ফরম পুরণ ও প্রবেশপত্র  জাঁলিয়াতির বিষয়টি নিয়ে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ হয়ে আসছে। পূর্বেও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বিয়টি অবহিত করা হয়েছে। শনিবার কাগজপত্র দেখে জাঁলিয়াতির বিষয়টি ধরা পরলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার রিপোর্ট পাবার পরে অসাধুচক্রটি ধরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এরকম ঝালকাঠিতে ১০টি ও পাথরঘাটায় ২৮টি প্রবেশপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিলেও অভিযোগ প্রমানিত হবার পরে তাদের ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করে আইনের আওতায় আনা হবে।