মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত হাবিলদার (অবঃ) আব্দুল মালেকের চিকিৎসা অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এই বীর যোদ্ধার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তার পরিবারের পক্ষে জোগার করা অসম্ভব না হওয়ায় বীর প্রতীক আব্দুল মালেকের সু-চিকিৎসার জন্য তার পরিবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছেন। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে তিনি পঙ্গুত্ব বরন করেছেন। তার বাম হাত ও পা অবশ হয়ে গেছে। ডায়েবেটিকস ও হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি ও শ্রবনশক্তি হারিয়ে আব্দুল মালেক এখন শয্যাশয়ী। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহনকারী রনাঙ্গন কাঁপানো গ্রুপ কমান্ডার, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক আব্দুল মালেক (৭৭) নানা রোগের কাছে এখন পরাজিত সৈনিক। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পরেছেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, আব্দুল মালেক ১৯৬১ সালে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীতে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে এসে যুবকদের নিয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি ইউনিট গঠন করে প্রশিক্ষণের জন্য তাদেরকে ভারতে নিয়ে যান। ভারতের বেগুনদিয়ার টার্কি ক্যাম্পে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আব্দুল মালেককে ৫৬ জন মুক্তিবাহিনীর একটি দলের গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তিনি তাদের নিয়ে এলাকায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধের ৯ সেক্টরের অধীনস্থ আ লিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজাম উদ্দিন ও হেমায়েত বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মুলাদী, উজিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে বীরত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি (মালেক) ছিলেন ৯ সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) জলিলের একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত সহচর। তার সহযোদ্ধা ছিলেন গৌরনদী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু, ডেপুটি কমান্ডার মনিরুল হক, সোহরাব হোসেন খানসহ এলাকার অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বের ভূমিকা পালন করায় তাকে (আব্দুল মালেক) বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি পূণরায় বিডিআর বাহিনীতে যোগদান করেন। হাবিলদার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ১৯৮৪ সালে তিনি অবসরগ্রহন করেছেন। বীর প্রতীক আব্দুল মালেকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, ২০১২ সালে তার স্বামী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন। পরবর্তীতে জমাজমি বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালিয়েছেন। এরপর গত দুইবছর আগে তার (রাবেয়া) উভয় কিডনীতে পাথর ধরা পরে। অপারেশন করে পাথর অপসারন করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাদের তিন পুত্র ও দুই কন্যা এখনও পড়াশুনা করছে। স্বামীর (মালেক) পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় চলে সংসারের খরচ। ফলে চিকিৎসার টাকার জন্য তাদের রিতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ কারণে নিরুপায় হয়ে তিনি তার অসুস্থ্য বীর প্রতীক স্বামী আব্দুল মালেকের সু-চিকিৎসার জন্য বঙ্গকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।