প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১১:২৫
ভারত সরকার বাংলাদেশ থেকে বোনা কাপড়, পাট ও সুতার বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুক্রবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধ থাকবে। এর পরিবর্তে শুধুমাত্র নাহভা শেভা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানির অনুমতি থাকবে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পণ্যের মধ্যে রয়েছে একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটজাত পণ্য এবং ব্লিচ না করা পাটের বোনা কাপড়।
এর আগে গত মে মাসে ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে স্থলবন্দর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। ওই সময়ও বলা হয়েছিল, মহারাষ্ট্রের নাহভা শেভা ও কলকাতা বন্দরের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পণ্যের আমদানি চালানো যাবে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ভারতের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত। বছরে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি হয় ভারতে। স্থলবন্দর থেকে আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কারণে এই খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর স্পষ্ট করেছে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের স্থলবন্দরসমূহের জন্য প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশ থেকে নেপাল ও ভুটানকে যেসব পণ্য সরবরাহ করা হয়, সেগুলোতে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হবে না। তবে এই পণ্যগুলো পুনরায় তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি গত কয়েক বছরে কিছুটা জটিল হয়ে উঠেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পলায়নের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এরপর থেকে ভারত বাংলাদেশকে নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক অভিযোগের মাধ্যমে চাপ দিচ্ছে বলে বাংলাদেশ সরকার দাবি করে আসছে।
বাংলাদেশের পাটজাত ও বোনা কাপড় খাতের ব্যবসায়ীরা এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ কঠিন হয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করছেন, এ ধরনের বাধা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি করবে এবং বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীদের মতে, স্থলবন্দর বাণিজ্যের জন্য সুবিধাজনক হওয়ায় এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ মানে সরবরাহ চেইনে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ মিশ্রিত রয়েছে। যদিও ভারত আগের মতো বাংলাদেশকে অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে, তবু সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে কিছু কঠোর নীতিমালা গ্রহণের ছাপ স্পষ্ট।
বাংলাদেশ সরকার এখন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেছে। পাশাপাশি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য বিকল্প পথ ও সমাধান খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক ফিরে আনার আশা অনেকেই প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশের বস্ত্র ও পাট খাতের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন যাতে ক্ষতি সীমিত রাখা যায় এবং বিদেশি বাজারে পণ্যের প্রবেশ অব্যাহত থাকে। আগামী দিনগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যক্ষেত্রে নতুন কোন পরিবর্তন ঘটবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।