পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন এবং চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলে সাধারণত আষাঢ়–ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্যা থাকে। সেই বন্যা মোকাবিলা ও ফসলের আবাদ নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি থাকে। তবে এবার এই দুই মাসে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে বন্যা দেখা দেয়নি। তবে হঠাৎ করে এই আশ্বিনে বন্যা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে হুহু করে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় পানি উপচে চরাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে ওই দুই ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের ৫০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ সেন্টিমিটার করে পানির উচ্চতা বাড়ছে। এতে চরম দুর্ভোগে আছে ওই এলাকার বাসিন্দারা। মাঠের ফসল ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও পানির অভাব। এখনো সরকারি বা বেসরকারিভাবে ওই সব অঞ্চলে কোনো সাহায্য–সহযোগিতা মেলেনি।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত সাত দিনে পানির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহের মাত্রা ছিলো ১৩ দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার। যেখানে বিপৎসীমা ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। মঙ্গলবার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, পানিতে বাড়ি ঘরে থাকতে পারছি না। ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে গেছে। বাড়ির ভেতরে ও আঙিনায় পানি প্রবেশ করায় পোকামাকড় ও সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে। মাঠের পাট কাটতে পারছি না। কাঁচা মরিচের ক্ষেত তো সব নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এখানে খাবারের সমস্যা, খাবার পানি ও ওষুধের সমস্যা বেশি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতিবছর পদ্মায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেলেও মাষকলাই চাষের আগেই পানি জমি থেকে নেমে যায়। ফলে চরাঞ্চলে তাঁরা মাষকলাইয়ের চাষ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর তেমন বন্যা না হওয়ায় তাঁরা ব্যাপকভাবে মাষকলাই চাষ করেছিলেন। হঠাৎ পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পানির কারণে কোথাও যেতে পারছি না। কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারছি না। আমরা চরের মানুষ পানিতে ডুবে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
এদিকে চিলমারী ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামের সব কটি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সেখানে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চিলমারী ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ বলেন, আকস্মিক বন্যায় তাঁর ইউনিয়নের চরের জমিতে চাষ করা প্রায় সব কৃষকের মাষকলাই ও আমন ধান তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে দৌলতপুর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর আলী রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও কৃষকদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। গত বুধবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদও সরেজমিন বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখেন।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জানান, রামকৃষ্ণপুর এবং চিলমারী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসকের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরি ত্রাণ নিয়ে বন্যা কবলিত মানুষকে সহায়তা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।