সুদানের প্রধানমন্ত্রী ‘অজ্ঞাত স্থানে’, সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার ২৫শে অক্টোবর ২০২১ ১০:৩৫ অপরাহ্ন
সুদানের প্রধানমন্ত্রী ‘অজ্ঞাত স্থানে’, সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা

সুদানের সামরিক বাহিনী দেশটির প্রধানমন্ত্রী আবদালাহ হামদককে ‘অজ্ঞাত স্থানে’ নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তবে সেনা বাহিনী পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা কোনো অভ্যুত্থান ঘটনায়নি। সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সোমবার আল জাজিরা এ খবর জানায়। সুদানের সামরিক কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি অন্তবর্তী সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন।


তিনি জানান, ২০১৯ সালের সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার বেসামরিক সরকার ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করবে, যা সংঘাতে রূপ নিয়ে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে।


সেনা কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর উচিৎ দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা অব্যহত রাখতে ভূমিকা রাখা, যা সংবিধানে উল্লেখ আছে। এ সময় তিনি নির্বাচনের ঘোষণাও দিয়েছেন। কাতারের দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানায়, আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান সুদানের প্রাদেশিক গভর্নরদের বরখাস্ত এবং ২০২৩ সালের জুলাইতে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।


আবদালাহ হামদককে গৃহবন্দী করার পর তার অফিস জনগণকে কথিত অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে হামদকের অফিস বলেছে, ‘যতটা শান্তিপূর্ণ-সম্ভব বিক্ষোভ দেখানোর জন্য আমরা সুদানের জনগণকে আহ্বান জানাই, যাতে চোরদের কাছ থেকে অভুত্থানকে ফিরিয়ে নেয়া যায়।’


এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুদানে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। রাজধানী খর্তুমের রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।


এ পরিস্থিতির মধ্যে সুদানের বিদ্রোহী নেতা ইয়াসির আরমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-নর্থ (এসপিএলএম-এন) এর উপ-চেয়ারম্যান। তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।


এর আগে বিবিসির খবরে বলা হয়, সুদানে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য ও অন্যান্য বেসামরিক নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমন সময় এ ঘটনা ঘটলো যখন দেশটিতে একটি অভ্যুত্থান হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবদালাহ হামদক রয়েছেন।


গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো ঘটেছে সোমবার ভোর রাতের দিকে। দেশটির সেনাবাহিনী এ নিয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি। তবে গনতন্ত্রপন্থী দলগুলো আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। তারা সমর্থকদের সেনা অভ্যুত্থান প্রতিহত করার আহবান জানিয়েছে।


রাজধানী খার্তুমে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রাস্তায় ক্ষুব্ধ জনতার বিক্ষোভের ছবি প্রকাশিত হয়েছে।


বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শহরের একজন বাসিন্দা জানান, শহরজুড়ে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে বাইরে চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। খার্তুম বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।


বছর দুই আগে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক ওমার-আল-বাশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর থেকে বেসামরিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। যদিও তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে আসছিল। তবে গত মাসে ওমার-আল-বাশিরের সমর্থকরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে দেশটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।


এ মাসের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধীরা রাস্তায় আন্দোলন নেমে সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা নিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। গনতন্ত্রপন্থীরা বলছে, এ আন্দোলন আসলে ক্ষমতা দখলের জন্য সেনাবাহিনীর সংগঠিত প্রচেষ্টা।


গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজধানী শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করে। তবে দেশটিতে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়ায় গত কয়েক মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রিয়তা বেশ পড়ে গেছে।


রয়টার্সের ছবিতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা রাজধানী খর্তুমে সড়ক অবরোধ করে টায়ার পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, অভূত্থানের খবরে তারা উদ্বিগ্ন।