দলের ভবিষ্যৎ সংকটে, জনবিচ্ছিন্ন হলে ৫ আগস্টের মতো ফল হবে: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৮শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৮:২৫ অপরাহ্ন
দলের ভবিষ্যৎ সংকটে, জনবিচ্ছিন্ন হলে ৫ আগস্টের মতো ফল হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় আয়োজিত কর্মশালায় অংশ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। তিনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে বলেন, “মানুষ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে না থাকে, তাহলে সেই দলের কোনো সার্থকতা নেই।” তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলের নেতাকর্মীদের জনসংযোগ আরও শক্তিশালী করার তাগিদ দিয়েছেন। তার মতে, যখন কোনো দল বা ব্যক্তি জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন তার পরিণতি ৫ আগস্টের মতো হতে পারে। 


তারেক রহমান আরও বলেন, জনগণের সাথে সঙ্গতি রেখে দল চলতে হবে। যদি জনগণের সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকে, তাহলে দলের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে। তার মতে, জনগণই শেষ কথা বলে এবং তাদের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা দলগুলোর জন্য জরুরি। তিনি নেতাকর্মীদের পরামর্শ দেন, জনগণের পাশে থাকতে এবং তাদের সমস্যা সমাধানে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে। তার ভাষায়, "কোনো নেতার একা সব সমস্যার সমাধান করার ক্ষমতা নেই, সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে।"


এছাড়াও, তারেক রহমান বিএনপির উদ্দেশে আরো কিছু কথা বলেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে তারা কোনো অন্যায় কাজ বা খারাপ কর্মকাণ্ডে জড়িত না হন। তিনি বলেন, “যে কেউ দলের কাজের পেছনে খারাপ কাজ করবে, তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখবে না বিএনপি।” তার মতে, জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অপরিহার্য, এবং যারা সেই বিশ্বাসকে ভঙ্গ করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। 


তারেক রহমান দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে। দলের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশের উন্নতি সাধন করা। তার বক্তব্যে স্পষ্ট ছিল যে, দলের জনপ্রিয়তা জনগণের ওপর নির্ভরশীল, এবং সেই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।


এ সময় তারেক রহমান জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চায় এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণে আত্মনিয়োগ করবে। তবে, যাদের দ্বারা জনগণের আস্থা নষ্ট হয়, তাদের প্রতি দলের কোনো সহানুভূতি থাকবে না। 


এখন প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি নেতাদের জনগণের কাছে পৌঁছানোর উপায় কী হবে? তারেক রহমানের ভাষায়, জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। একে অপরের সহযোগিতায় দলকে জনগণের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। এটি শুধুমাত্র দলের ভিতরের সমস্যা নয়, বরং জনগণের সাথে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি করার একটি সুযোগ হতে পারে। 


তবে, তারেক রহমানের মন্তব্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান। তার মতে, দলের নেতারা যদি জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, তবে দলের কাজের সার্থকতা থাকবে না। এজন্য তাকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। 


এছাড়া, তিনি দলের কর্মীদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা দেন। জনগণের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সকল নেতাকর্মীকে অবশ্যই সততার সাথে কাজ করতে হবে। যেকোনো নেতাকর্মী যদি দলের নীতি থেকে সরে যান, বা কোনো খারাপ কাজ করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কঠোর অবস্থান থাকবে। 


তারেক রহমানের বক্তব্যে সবচেয়ে বড় বার্তা হলো, "যারা দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করতে চায়, তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।" এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দলের ঐক্য বজায় রাখতে এবং জনগণের আস্থা ধরে রাখতে নেতাকর্মীদের প্রতি দৃঢ় নির্দেশনা দিয়েছেন। 


তারেক রহমানের মন্তব্যগুলি দলের ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় একটি গুরত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএনপির জনপ্রিয়তা বাড়াতে এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে তারেক রহমানের এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। 


এখন দেখার বিষয় হবে, তারেক রহমানের এই বার্তা দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কতটা প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয় এবং তারা এই নির্দেশনা মেনে দলের আস্থা ও জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে কিভাবে কাজ করেন। 


এছাড়া, তারেক রহমানের এই বক্তব্যে দলের ঐক্য বজায় রাখার একটি স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। যদি বিএনপি জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তাদের রাজনৈতিক পরিণতি কি হতে পারে, তা উল্লেখযোগ্য।