ছাত্রলীগের মার খেলেও যুবলীগের ভালোবাসা পেলেন ভিপি নুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২৪শে নভেম্বর ২০১৯ ১০:২৫ অপরাহ্ন
ছাত্রলীগের মার খেলেও যুবলীগের ভালোবাসা পেলেন ভিপি নুর

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কাছে মার খেলেও সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর পেয়েছেন আন্তরিকতার স্পর্শ। গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের সম্মেলনে আগত নেতাকর্মীদের ভিড় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যুবলীগ নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিন অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় যুবলীগ নেতাকর্মীদের। ডাকসু ভিপিকে পেয়ে তৃণমূল থেকে আসা যুবলীগ নেতাকর্মীরা জড়িয়ে ধরেন। তাকে নিয়ে সেলফি তোলেন। অনেকে গ্রুপ ছবিও তোলেন।

এ সময় যুবলীগ নেতাকর্মীরা ডাকসু ভিপির সঙ্গে হাতে হাত মেলান, কুশলবিনিময় করেন। ভিপি নুরও সবার সঙ্গে হেসে কথা বলেন, ছবি তোলেন। অথচ গত এক বছরে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের আটবার হামলার শিকার হন ভিপি নুর।

এ ঘটনার বিস্তারিত দিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান।

পাঠকদের উদ্দেশে তার সেই স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো- (ফেসবুক পোস্টের বানান ও ভাষা অবিকৃত রাখা হয়েছে।)

‘পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহতায়ালা যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। মহান আল্লাহতায়ালা যাকে সম্মানিত করেন পৃথিবীর সব মানুষ মিলেও তাকে অপমানিত করতে পারেন না।

নুরুল হক নুর ডাকসুর ভিপি হয়েও এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা আটবার হামলার শিকার হয়েছেন, পুলিশের দ্বারা মামলার শিকার হয়েছেন; কিন্তু কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি তিনি।

আমরা যারা 'ছাত্র অধিকার পরিষদ’কে ধারণ করি এবং তার সহযোদ্ধা, আমরা প্রায় সবাই কমবেশি পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা-মামলা, হয়রানির শিকার হয়েছি। তবে কখনও ভয় পেয়ে পিছপা হইনি কিংবা ভীতু হয়ে পালিয়ে যাইনি। বরং আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে সম্মুখসমরে এগিয়ে গেছি। এভাবেই আজকে ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর বাংলার ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

ছাত্রলীগের নেতা হয়ে ছাত্রলীগ করা ছেলেটিও যখন একান্ত ব্যক্তিগত আলোচনায় বলে যে, ভাই আমরা রাজনীতির স্বার্থে আর ক্ষমতার কারণে আদর্শটা ধরে রাখতে পারিনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তোমরাই দাঁড়াতে পেরেছ। কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করো না। লড়াইটা চালিয়ে যাও । বিরোধিতা করতে হয়, তাই তোমাদের বিরোধিতা করি। তবে আমরাও মনেপ্রাণে তোমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে সাপোর্ট করি। আমরা পথ হারিয়েছি, তবে তোমরা কোনো দিন পথ হারিও না।

সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে নিজেদের বিতর্কিত করেছে যুবলীগ নামক আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনটি। আজকে যুবলীগের সম্মেলন। সমগ্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে ছিল যুবলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের ভিড়।

ক্যাম্পাস থেকে শাহবাগের দিকে আসছিলাম আমরা। হঠাৎ নুর ভাইকে দেখে যুবলীগের একদল লোক দৌড়ে এসে তার সঙ্গে কথা বলল। মনে হলো তারা যুবলীগ নয়, বরং নুর ভাইয়ের লোক। আওয়ামী যুবলীগ করা লোকগুলোর মুখ থেকেই একের পর এক প্রশংসাসূচক বাক্য বের হতে থাকল নুর ভাই সম্পর্কে। নুর ভাইকে তারা বলতে লাগল- ভাই, এতকিছুর পরও এত নির্যাতন সহ্য করে আপনারা সত্য এবং ন্যায়ের লড়াই করে যাচ্ছেন। আপনারা আপনাদের আন্দোলন চালিয়ে যান, সমগ্র দেশ আপনাদের সঙ্গে আছে। আপনার বক্তৃতা আমাদের খুব ভালো লাগে। আপনারা একদিন জয়ী হবেন ইত্যাদি ইত্যাদি নানান প্রশংসাসূচক বাক্য তাদের মুখে। পরে সবাই তার সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলছিল। আমরা একটু দূরে দাঁড়িয়ে বিষয়টি দেখে খুবই আনন্দ পাচ্ছিলাম। আর আমিও দৃশ্যটি আমার ক্যামেরাবন্দি করি।

অথচ সারাদিন সরকার, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সমালোচনা করি আমরা। তবু সেই দল করা মানুষগুলো আমাদেরই ভালোবাসে। কারণ তারা জানে সত্য সুন্দর, সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই। এটিই তো আমাদের আন্দোলন করার সার্থকতা!

সুতরাং একটা কথা বলতে চাই- সত্য ও আদর্শের জায়গাটা ধরে রেখে লড়াইটা চালিয়ে যান। বিজয় একদিন হবেই। কারণ সত্য আর ন্যায়ের বিজয় তো অনিবার্য।’

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব