
৮ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক শূন্য শ্রীমঙ্গলের ৭০ প্রাথমিক বিদ্যালয়

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:৫২

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় দীর্ঘ আট বছর ধরে ৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। ২০১৭ সাল থেকে এই শূন্য পদগুলোতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে, যা শিক্ষার মানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে প্রধান শিক্ষক শূন্যতার কারণে কর্মচাঞ্চল্য ও শৃঙ্খলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ অনেকটাই সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।
এমন পরিস্থিতি স্বীকার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ২০১৭ সালের পর থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার কারণে সহকারী শিক্ষকদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে। অনেক সহকারী শিক্ষককে একই সময়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, যাতে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম একসঙ্গে চলতে হচ্ছে। এই কারণে শিক্ষকদের ওপর চাপ বেড়েছে এবং নিয়মিত পাঠদানেও ব্যাঘাত ঘটছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় মোট ১৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, এর মধ্যে ৭০টির প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য। এমনকি ৭টি বিদ্যালয়ে চলতি সময়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করছেন। তবে বাকিগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শূন্য অবস্থায় রয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলে, তার সময় সীমিত হয়ে যায়। এতে করে তিনি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না, যা শিক্ষার মানে প্রভাব ফেলছে।
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষকদের মধ্যে কোনো শৃঙ্খলা বজায় থাকে না, এমন মন্তব্য করেছেন শিক্ষকরা। তারা জানান, শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছামতো কর্মব্যস্ততার মাঝে নিয়মিত পাঠদানে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে যথাযথ শিক্ষা পাওয়ার কথা, তা পাচ্ছে না। বিদ্যালয়ে কার্যক্রমের জটিলতার কারণে শিশুদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ কমে যাচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যত জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

শিক্ষক সংকটের পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে শ্রেণি কক্ষে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ফলে শিক্ষকরা পাঠদানে মনোযোগ দিতে পারছেন না, যার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্যা নিয়ে শিগগিরই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা, যাতে করে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা স্বাভাবিক পরিবেশে চলতে পারে।
শ্রীমঙ্গলের ৭০টি স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকা, একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে এটি শিক্ষার গুণগত মানে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা উচ্চমানের শিক্ষা লাভে ব্যর্থ হচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

শিক্ষা কার্যক্রমের বিপর্যয়ে পড়ে যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই, সেগুলোর শিক্ষকদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি এবং স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে। তারা সবাই একমত, যে দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা প্রয়োজন। অন্যথায়, এই সমস্যা আরো গুরুতর রূপ নেবে এবং শ্রীমঙ্গলে শিক্ষার মান আরও কমে যাবে।
এদিকে, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তার মতে, বিভিন্ন কারণে ২০১৭ সাল থেকে পদোন্নতি এবং নতুন নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। তিনি আশা করেন, শিগগিরই সমস্যাটি সমাধান হবে এবং শূন্য পদ পূর্ণ করা হবে। তবে, তিনি জানান, মামলার জটিলতা এবং অন্যান্য দায়িত্বে কারণে শূন্য পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে।

শিক্ষক এবং অভিভাবকরা আশা করছেন, শ্রীমঙ্গলের প্রধান শিক্ষক শূন্য ৭০টি বিদ্যালয়ে শীঘ্রই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষা পেতে পারে এবং বিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকে। প্রশাসনিক কার্যক্রমেরও উন্নতি ঘটবে, এবং বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
শ্রীমঙ্গলে শিক্ষার উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে, তা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

সর্বশেষ সংবাদ
