প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:৩১
২০১৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী ৬.২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় নিয়ে উজিরপুর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। উজিরপুরকে ডিজিটাল পৌরসভা করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া লক্ষ্যে প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে তিনি তার এলাকার জনগণকে সাথে নিয়ে পৌরসভার উন্নয়ন কাজ শুরু করেন। শুরুতে নানা প্রতিকূলতা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা এবং তার রাজনৈতিক অভিভাবক সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরামর্শ ও এমপি শাহে আলমের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে গেছেন। যার কারণেই টানা দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বলে দাবী করেন মেয়র মোঃ গিয়াসউদ্দিন বেপারী। প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমেই তিনি তার এলাকার শতভাগ সড়ক পাকাকরণ এবং শতভাগ বিদ্যুত সুবিধা দিয়েছেন পৌরবাসীর মাঝে। তবে এখনো শতভাগ নাগরিক সুবিধা পায়নি পৌরবাসী। অবশ্য দ্বিতীয় দফা মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সড়কবাতি, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ আধুনিক ও মডেল পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছেন। এজন্য একটি মাস্টারপ্লান করে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন জানিয়ে মেয়র গিয়াসউদ্দিন বলেন, অনুমোদন পেলে জনগণকে সাথে নিয়ে শতভাগ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর সন্নিকটে উজিরপুর পৌরসভা। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ৬.২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় মোট জনসংখ্যা ১৫ হাজার ৬২৯ জন (সর্বশেষ আদম শুমারী অনুযায়ী)। এ পৌরসভায় শিক্ষার হার ৯৭ শতাংশ। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ভোটার রয়েছেন ১০ হাজার ৪৭৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৩৫৫ জন আর মহিলা ভোটার ৫ হাজার ১২৩ জন। এতো ছোট আয়তনের এ পৌরসভায় সরকারি একটি হাসপাতাল, ৮টি প্রাইমারী স্কুল, ১টি সরকারি হাইস্কুল, ২টি কলেজ, ১টি মাদ্রাসা, ৪৫টি মসজিদ, ৮টি দূর্গা মন্দির ও ৫০টি মন্দির রয়েছে।
দৈনিক ভোরের কাগজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেয়র গিয়াস উদ্দিন বেপারী জানান, “প্রথমবার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এলাকার সড়ক ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে তার ছোঁয়ায় উজিরপুর পৌরসভায় পেয়েছি।” আর এ কারণেই বর্তমানে পৌরসভার মোট ৫২ কিলোমিটার সড়কের ৯০ শতাংশ পাকাকরণ করা হয়েছে। রাস্তার উন্নয়ন করা হলেও শতভাগ সড়কবাতি স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে নিজস্ব উদ্যোগে সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সড়ক বাতি বসানো হয়েছে। এছাড়া শতভাগ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছেন পৌরবাসী। এদিকে এডিবি’র সহযোগিতায় কিছু ড্রেনে নির্মাণ করা করা হলেও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সড়ক বাতি নিশ্চিত করাকে প্রাধাণ্য দিচ্ছেন তিনি”। এছাড়া বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা ভবনে কক্ষ ভাড়া নিয়ে পৌরসভা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জায়গার অভাবে নিজস্ব পৌরভবন করা যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
মেয়র গিয়াস উদ্দিন জানান, তার এলাকায় শতভাগ বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হলেও বিধবা ভাতা এবং পঙ্গু ভাতা আংশিক প্রদান করা হয়েছে। মশক নিধনে নিয়মিত ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওষুধ ছেটানো কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এখনো শতভাগ নাগরিক সুবিধা দিতে না পারায় তার মেয়াদে এখন পর্যন্ত কোন বর্ধিত করারোপ করা হয়নি। তবে ৩টি হাট-বাজার ইজারা ও পৌর করের টাকা দিয়েই পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। নাগরিক সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত নতুন করে কোন পৌরকর বাড়ানো হবেনা বলেও তিনি জানান।
মাদক ও সন্ত্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁর পৌরসভা শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত। পৌরসভার কোন কাজে কাউকে কোন পার্সেন্টেজ দেওয়া লাগে না। এছাড়া এলাকায় কোন সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজি নেই। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর মাদক নির্মূলের জন্য নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়ে একটি কমিটি করেছেন যারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। তবে শতভাগ মাদক নির্মূল করতে আরো সময় লাগবে বলেন তিনি।
মেয়র গিয়াসউদ্দিন বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহে আলম এর উদ্যোগে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া তার এলাকার মুসলিমদের জন্য ৬০ শতাংশ জমির উপর নিজস্ব কবর স্থান নির্মাণ করা হয়েছে এবং হিন্দুদের জন্য একটি শ্মশান নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে। দুটি নির্মাণ সম্পন্ন হলেই জনসাধারণের জন্য তা একত্রে উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার নেতৃত্বে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে উজিরপুর পৌরসভায় দলের সাংগঠনিক অবস্থা অনেক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, সুখে-দুখে পৌরবাসীর পাশে থেকেছি। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাদেরকে সাথে নিয়েই সকল উন্নয়ন কাজ করেছি। এজন্যই এলাকার মানুষ আমাকে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত করেছে। কেননা ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি ৬ হাজার ৩০১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী পেয়েছিলেন ২ হাজার ৩৬০ ভোট। আর ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিন বেপারী নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৫ ভোট। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোঃ শহিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৮৩৫ ভোট।
পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিনের বাবা উজিরপুর থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। বাবার পথ ধরেই তিনি রাজনীতিতে আসেন। এর আগে তিনি তিন তিনবার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
তিনি বলেন, “বিগত দিনে এলাকায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত, বেকারদের কর্মসংস্থান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে গেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহে আলম ছাড়াও আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক প্রাক্তন চিফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় উজিরপুর পৌরসভাকে ভবিষ্যতে সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত একটি মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি”।