
সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর মৃত্যু !

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২১, ২:৫৪

পিরোজপুরে অসুস্থ অবস্থায় সরকারি এ্যাম্বুলেন্স সেবা না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী পারভীন রহমান এর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পিরোজপুর পৌর শহরের উকিল পাড়া এলাকায় সোমবার গভীর রাতে সরকারি এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের নম্বরে বারবার ফোন দেয়ার পরেও ফোন না ধরায় এ্যাম্বুলেন্স এর অভাবে হাসপাতালে নিতে না পেরে শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন পারভীন রহমান বলে অভিযোগ করেছেন মেয়ের জামাই কামরুজ্জামান পলাশ।

মৃত পারভীন রহমান (৫৫) জেলার মঠবাড়িয়ার দেবীপুর গ্রামের সাফা বন্দর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে নিজ বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

মৃত পারভীন রহমান এক আত্মীয় মো: আব্দুল আজিজ খান জানান, রাত ২টার দিকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের সরকারী এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার নাম্বারে বার বার ফোন দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কয়েকবার ফোন না ধরে পরে ফোন কেটে দেয়।


তিনি বলেন, অনেকবার এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারের নাম্বারে কল দিলে তিনি ফোন ধরেননি। ফলে আমরা খাটের তক্তার (চালনি) উপর শুইয়ে হেটে হেটেই স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগীতায় হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাই। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে আমরা ইন্দুরকানী থেকে একটি এ্যাম্বুলেন্স ফোন দিয়ে এনে মৃতের লাশ বাড়িতে পাঠাই। তিনি অভিযোগ করেন জেলা হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোতালেবকে অনেকবার ফোন দেয়া হয়েছে। তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।

স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন প্রাণফোঁটার পরিচালক ম. শহিদুল্লাাহ জানান, মৃতের আত্মীয়-স্বজন সরকারি এ্যাম্বুলেন্স ফোন দিয়ে না পেলে আমাদের সংগঠন (প্রাণফোঁটার) নাম্বারে ফোন দেয়। আমরা এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোতালেব এর নাম্বারে ফোন দেই।

কিন্তু সে ফোন কেটে দিচ্ছিলেন। তার পরপরই আমরা আমরা উকিলপাড়ার নাসিমা মঞ্জিলে পৌঁছে দেখি পরিবারের লোকজন তাকে ভবনের উপর থেকে নিচে নামাচ্ছে। আমরা ও তার স্বজনদের সহযোগিতায় তাকে হাতে হাতে তক্তার উপর করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

জেলা হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডাঃ আরিফ হাসান জানান, রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জেনে তিনি ধারনা করছেন, রোগীর করোনা ছিলো না তিনি ষ্ট্রোক অথবা হার্ট এ্যাটাকে মারা যেতে পারেন। তবে তিনি এ্যাম্বুলেন্স না পাওয়া সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি।

এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোতালেব হোসেন বিষয়টি অস্বাীকার করে বলেন, " আমার কাছে এরকম কোন ফোনই আসেনি। আমি এর আগের দিন রাতে ডা. বিডি হালদারের মা করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে খুলনা গিয়েছিলাম। সেদিন রাতে এমন একটা ফোন এসেছিল। আমি বলেছিলাম আমি রোগী নিয়ে খুলনায় আছি। আপনারা অন্যভাবে ব্যবস্থা করেন"।


পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি জানিয়েছেন, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে দুইজন এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার তাদেও দুজনেরই নামে হত্যা মামলার রয়েছে। এদের মধ্যে কবির হোসেন পলাতক রয়েছে এবং মোতালেব জামিনে রয়েছেন।

সিভিল সার্জন বলেন, গতকাল রাতে মোতালেব করোনার রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তাই তিনি হয়তো ফোন রিসিভ করেন নাই। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। সচিব মহোদয় আমাদের একজন এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার দেয়ার কথা বলেছেন। নতুন ড্রাইভার পেলে ড্রাইভার সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ
