প্রকাশ: ২১ মে ২০২১, ১৬:৩০
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে ধান কাটা নিয়ে সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে, বিকালে ও শুক্রবার সকালে দফায় দফায় ইউনিয়নের রায়পুর ও মিস্ত্রিকান্দি এলাকায় সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। আহতের মধ্যে এক বাক-প্রতিবন্ধী সোবাহান জমাদ্দার(৪৫) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার লক্ষীপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন কেন্দু কাজীর সঙ্গে একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফজলু বেপারির গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতা চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুরে ধান কাটা নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন কেন্দুর নেতৃত্বে তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফজলু বেপারির পক্ষের লক্ষীপুর এলাকার এক বাকপ্রতিন্ধীসহ অর্ধশত ঘরবাড়ী ভাংচুর লুটপাট চালায়।
এরপর বিকালে অপরপক্ষ লক্ষিপুর এলাকার ও বাজারের কয়েকটি ব্যবসায়ীর দোকানপাট কুপিয়ে ভাংচুর চালায়। এসময় দ্পুক্ষের প্রায় ২০জন আহত হয়। আহতরা হলেন, সেলিম খান, আবু আলিম খান, আবুল বাশার খান, আঃ জিলহাস খান, আলি বেপারী, মন্নান বেপারী(সাবেক ইউপি সদস্য), সোবাহান জমদ্দার, নুরুল ইসলাম, আলীম খান, আলিয়া জমাদ্দার, আরবি খান,আলী হোসেন, রিয়াজুল খন্দকার, আহতের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজলূ বেপারী সমর্থক বেশীর ভাগ।
আহত সোবাহানের স্ত্রী হোসনেআরা বেগম জানান, আমার সামনে থাকা অবস্থায় আমার বোবা স্বামীকে কুপিয়ে মারতে চাইছে। আমার তিনটি সন্তান আমরা ঢাকা থাকতাম কিছুদিন যাবত বাড়ী আসছি,কামলা দিয়ে আমাদের সংসার চলে কিন্ত আমার স্বামীকে কেন হত্যা করতে চাইছে আমি এর সঠিক বিচার চাই।
লক্ষিপুর বাজারের এক দোকনাদার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, এই ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যানে যে অবস্থায় অতিসত্তর এখানে একটি পুলিশ ফাড়ি প্রয়োজন। পুলিশ আসতে আসতে আমাদের সব শেষ হয়ে যায়। এলাকার দুই নেতা তাদের কোন ক্ষতি হয় না, হয় আমাদের। আমরা প্রশাসনে দৃষ্টি কামনা করছি।’
লক্ষীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর হক বেপারী বলেন, ‘গেন্দু বিএনপির নেতা ছিলেন। এখন নব্য আওয়ামী লীগ করেন। তিনি এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেন। এতে আমাদের লোকজন বেশি আহত হয়।’ আমার এক নিরিহ বাক-প্রতিবন্ধীকে কুপিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে। বোবার কোন শত্রু থাকে কিন্ত সেটা তারা করছে একজন বোবাকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে চাইছে।
লক্ষীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন গেন্দু কাজী বলেন, ‘খামাখা ধান কাটা নিয়ে ফজলুর লোকজন এলাকায় হাঙ্গামা করছে। বাড়িঘর ভাঙচুর লুটপাট করছে। এর আগে আমাদের ওপর হামলা করেছিল। এখন আবারও হামলা করল। ফজলুর নির্দেশে তাঁর লোকজন আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। ওই বোবা লোকটি বাড়ীর পাশের ব্রীজটি ভেঙ্গে ফেলেছে।
এ ব্যাপারে কালকিনি থানার ওসি ইশতিয়াক আসফাক রাসেল বলেন, আমরা ঘটনার বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি তবে শুনেছি ধান কাটা নিয়ে দু গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে কিন্ত এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এর আগেও হামলা ও বিস্ফোরণের মামলায় ওই দুই চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
উলেখ্য, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় এবং বিস্ফোরক মামলায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন কেন্দু কাজী ও একই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. ফজলু বেপারিকে গ্রেফতার করার পর কিছুদিন পর তারা দুইজনই জামিনে বের হয় এরপর আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
#ইনিউজ৭১/জিয়া/২০২১