প্রকাশ: ২ মে ২০২১, ১১:২৫
নওগাঁয় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে এক গৃহবধুর গায়ে আগুন দিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ওই গৃহবধু নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়ন এর চক-চাপাই গ্রামের মোসলেম উদ্দিন এর স্ত্রী রিতা বেগম ( ৩৫) ।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নিহত রিতা বেগম স্বামী মোসলেম উদ্দিন এর ভাই ও ভাতিজাদের সাথে দীর্ঘ দিন জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জেরে গত মাসের ২৪এপ্রিল ( শনিবার ) রাত ১০দিকে রিতা বেগমকে হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এসময় রিতা বেগমের স্বামী নসিমুল চালক মোসলেন উদ্দিন প্রামানিক ক্লান্ত শরীর হওয়ায় ঘরে ঘুমিয়ে ছিল।
এর পর ঘুম ভাঙ্গলে রিতা বেগম স্বামীকে বিষয়টি জানালে এরই প্রেক্ষিতে গত ২৯এপ্রিল ( বৃহস্পতিবার ) সকালে থানায় ৪জনের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযুক্তরা হলেন মোসলেম উদ্দিনের ভাতিজা আলামিন প্রামানিক (২৩), আলামিনের মা সাগিদা বেগম ( ৪৫), সোসলেম উদ্দিন এর চাচাতো ভাই সানোয়ার প্রামানিক (৩২) ও জলিল প্রামানিক (৩৫ )
এর পর ৩০এপ্রিল ( শুক্রবার ) রাত ১টার বাড়ির বাহিরে উঠানে থাকা বাথরুমে যাওয়ার পর বাথরুম ছেড়ে ঘরে ফেরার পথে ৪-৫জন গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এসময় রিতা বেগম চিৎকার করতে লাগলে মেয়ে আরিফা ইয়াসমিন,
রিতা খাতুনের স্বামী মোসলেম উদ্দিনসহ স্থানীয় প্রতিবেশী এগিয়ে আসলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। এসময় গায়ের আগুন নেভানোর জন্য রিতা বেগম পুকুর গিয়ে ঝাপ দেয়। পুকুর থেকে রিতাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়া হলে প্রাথমিক চিৎকিসা দেয়ার পর উন্নত চিৎকিৎসার জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল নেয়া হলে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মারা যায়।
হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে এ্যাম্বোলেন্সে করে মরদেহ নওগাঁ সদর মডেল থানায় নেয়া হলে থানা পুলিশ মরদেহটি দাফন করার জন্য বাড়িতে নিয়ে যেতে বলে। এর পর নিহত রিতা বেগমের বাবার বাড়ি সদর উপজেলা গাংজোয়ারে রাখা হয়েছে হয় মরহেটি। অভিযুক্তুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা ও আইনআনুক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে মরদেহ দাফন করা হবে জানিয়ে ন্যায় বিচার দাবি করেন নিহতের পরিবার।
নিহত রিতা খাতুনের স্বামী মোসলেম উদ্দিন জানান, বাড়ির দেড়কাঁঠা (২শতক ) জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল ভাই-ভাতিজাদের সাথে। এর প্রেক্ষিতে গত মাসের ২৪এপ্রিল রাতে আমি লসিমন চালিয়ে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে গেলে অভিযুক্ত ৪জন হুমকি দিয়ে যায় আমার স্ত্রী রিতাকে। এসময় প্রধান অভিযুক্ত আলামিন আমার স্ত্রীকে ৫দিনের মধ্যে বিবাদকৃত ছেড়ে দিলে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।
পরে থানায় অভিযোগ করাহলেও তাৎক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। এর পর শুক্রবার রাতে আমার স্ত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাহিরে গেলে অভিযুক্তরা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এর পর আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতাল ও পরে বগুড়া জিয়াউর রতমান হাসপাতালে নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যায়।
মারা যাবার আগে আমার স্ত্রী অভিযুক্ত আলামিন,সাহিদা,সানোয়ান ও জলিল এর নাম বলে গেছে। যতক্ষণ না মামলা ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না গ্রহণ না করা হবে ততক্ষন আমরা লাশ দাফন করবো না। এখন আমার ১৬ বছরের এক মেয়ে ও ৮বছরের ছেলেকে নিয়ে কিভাবে চলবো। কি শান্তনা দিবো তাদের। আমরা থানায় এসেছি মামলা নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
নিহত রিতা খাতুনের মেয়ে আরিফা ইয়াসমিন, বলেন মাকে হাসপাতালে ভার্তি করা হলে মা একটু একটু কথা বলতে পারতো। মা মারা যাবার আগে ৪জনের নাম বলে গেছে যে তরাই গায়ে আগুন দিয়েছে। আমার মাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার কঠিন বিচার চাই।
নিহত রিতা খাতুনের মা রেকেয়া বেগম বলেন, আমার মেয়েটাকে হত্যা করা হয়েছে আগুন দিয়ে। এর আগেও তিন বছর আগে সানোয়ার ও জলিল নামে দুই জন আমার মেয়েকে মেরে জখম করেছিল। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত ৪জনের বাড়িতে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তালা ঝুলানো রয়েছে।নওগাঁর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি ) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রথমে নিহত রিতা বেগম থানায় অভিযোগ করেছিলেন। তার পরদিন রাতেই গৃহবধুর গায়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেলে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে মারা যায়।
এর পর আজ থানায় মরদেহ নিয়ে আসলে আমরা পরিবারের সদস্যদের বলি, যেহেতেু মরদেহটির সুরতাল প্রতিবেদন বগুড়াতে করা হয়েছে তাই মরদেহ দাফন করা হোক। আমরা বিষয়টি জানার পর সাথে সাথে আজ ( শুক্রবার ) বিকেলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম কিন্তু অভিযুক্তদের কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরিবারে পক্ষ নিহতের মা রেকেয়া বেগম মামলা করেছেন । আমরা বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
#ইনিউজ৭১/জি/হা/২০২১