ইইউ যত খুশি তত নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে : ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১১ই জুলাই ২০২৩ ০২:৫২ অপরাহ্ন
ইইউ যত খুশি তত নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে : ইসি

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছেন, ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন (ইইউ) যত খুশি তত নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারবে। এক্ষেত্রে ইসির কোনো লিমিটেশন নেই বলে জানান তিনি।মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত সচিব।


অশোক কুমার বলেন, আজ ইইউ’র সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক হয়েছে। তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন। আমাদের ভোটার, ভোটকেন্দ্র ও প্রস্তুতি এবং সিসি ক্যামেরাসহ সব বিষয়ে তারা জানতে চেয়েছেন। আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই তাদের একটি টেকনিক্যাল টিম আমাদের সঙ্গে মিটিং করবে। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা-১ ও ২ এর সঙ্গে মিটিং করে তারা আরও বিশদভাবে জানার চেষ্টা করবে। আজকের মিটিংয়ে তাদের কিছু প্রশ্ন ছিল, সেগুলোর জবাব দিয়ে আমাদের কমিশন তাদের সন্তুষ্ট করেছে। আজকের মিটিংয়ে তারা সন্তুষ্ট।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমাদের পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চেয়েছে এবং তাদের পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য যা যা করতে হবে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমরা এ বিষয়ে তাদের বলেছি, পর্যবেক্ষক পাঠাতে হলে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন দিলে ভালো হয়। কারণ, আরও কিছু ফরমালিটি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্সের বিষয়ও রয়েছে। পর্যবেক্ষক পাঠাতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের কোনো লিমিটেশন নেই। তবে নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক যত খুশি তত তারা পাঠাতে পারবে।


অতিরিক্ত সচিব বলেন, অবজারভার পাঠানোর বিষয়ে কি কি প্রস্তুতি নিতে হয়, ইসি কি করবে তা জানতে চেয়েছে। কমিশন বলেছে, তারা যত সংখ্যক ইচ্ছা অবজারভার পাঠাতে পারে, এর কোনো লিমিটেশন নেই। আবেদনের জন্য টাইম ফ্রেম আছে কি না জানতে চেয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদনগুলো এলে সুবিধা হয় বলে কমিশন জানিয়েছে।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে অশোক কুমার বলেন, আমাদের এ পর্যন্ত ৯১১টি নির্বাচন হয়েছে। তাতে সন্তোষ রয়েছে তাদের। পরিবেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত সেটিসফাইড হলেও তারা আরও আলোচনা করবে। তারা ২৩ জুলাই পর্যন্ত থাকছে। ১৮-২২ জুলাইয়ের মধ্যে তারা আবারও টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে বসবে। নির্বাচনকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটে আনার বিষয় আলোচনায় আসেনি।


তিনি বলেন, তারা প্রধান নির্বাচনী প্রস্তুতিটা কী তা জানতে চেয়েছে। আমাদের মেইনলি রোডম্যাপ, আমরা তা নিয়ে কাজ করছি। ট্র্যাকেই আছে। নির্বাচন কমিশন ফেয়ারলি নির্বাচন করতে সক্ষম কি না সেসব বিষয়গুলো জানতে চেয়েছে। ইসি সে বিষয়গুলো এক্সপ্লেইন করেছে, তারা সেটিসফাইড।


এর আগে সকালে রাজধানীর গুলশানে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) সঙ্গে বৈঠক করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে ইএমএফ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, উনারা সংবিধানে নেই এমন কোনো কথা বলেননি এবং তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে কোনো কিছু তারা জানতে চাননি। তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে তারা কোনো আগ্রহ প্রকাশ করেননি।


গত রোববার ভোরে ঢাকায় আসে ইইউ প্রতিনিধি দল। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞ হিল্লেরি রিকার্ডোর নেতৃত্বে দুই সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ মূল্যায়নের কাজ করবেন তারা। আগামী ২৩ জুলাই তাদের বাংলাদেশ সফর শেষ হবে। ইইউ প্রতিনিধি দলটি সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবে।


এর আগে, ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। সোমবার (১০ জুলাই) বিকেলে গুলশানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির বাসভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।


জানা গেছে, ইইউর প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবে।


নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে দুই সপ্তাহের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছে ইইউর প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলটি। সফরের শুরুর দিন রোববার (৯ জুলাই) সকালে ঢাকায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির গুলাশানের বাসায় শুরু হয় প্রথম কার্যক্রম। সেখানে ইইউর কয়েকটি সদস্য দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে রুটিন বৈঠক করেন তারা। পরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গেও বৈঠক করেন তারা।


বাংলাদেশে দুই সপ্তাহ অবস্থান করবে ইইউর পর্যবেক্ষক দলটি। বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের কাছে তাদের মূল্যায়নের মতামত জমা দেবেন বিশেষজ্ঞ দলটি।


তাদের মতামত ইতিবাচক হলে পরবর্তী সময়ে আরও প্রতিনিধি দল পাঠাবে ইইউ। আর সবকিছু ঠিক থাকলে অর্থাৎ প্রতিনিধি দলের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ইইউ প্রধান। পরবর্তী সময়ে যে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দল আসবে তাদের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়াদি মূল্যায়ন করবে এই দলটি।