হিলি রেলস্টেশনে মাষ্টার শূন্যতার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শনিবার ৬ই মে ২০২৩ ০৪:৫১ অপরাহ্ন
হিলি রেলস্টেশনে মাষ্টার শূন্যতার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের

দিনাজপুরের হিলি রেলস্টেশনের কোনো স্টেশন মাস্টার নেই। তাই ট্রেন দাঁড়াচ্ছে প্ল্যাটফরমশূন্য লাইনে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বৃদ্ধ, নারী ও শিশু যাত্রীরা। বিষয়টি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। বারবার উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন করেও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত। 


শনিবার (৬ মে) হিলি রেলস্টেশনের ট্রেনযাত্রী ও বুকিং সহকারীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি রফতানি কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে হিলি রেলস্টেশনের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। তবে সরকার এই বন্দর থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকলেও এখন পর্যন্ত এই রেলস্টেশনে আধুনিকতার কোন ছোঁয়া লাগে নাই। রেলস্টেশনে নেই যাত্রী ছাউনি, নেই টয়লেট, নেই বিশ্রামাগার।


  অযত্ন অবহেলায় রেলস্টেশনের স্টাফ কোয়ার্টার ভবনগুলো এখন প্রায় ধংসের দারপ্রান্তে। আগে ঢাকাগামী ট্রেন এই স্টেশনে দাঁড়ার কারণে যাত্রী সংখ্যা বেশি ছিলো। সীমান্তের কোল ঘেঁষে রেললাইন যাওয়ায় বিজিবি'র আপত্তির কারণে ঢাকাগামী ট্রেন এই স্টেশনে দাঁড়ায় না। ফলে ঢাকাগামী যাত্রীদের ট্রেনে উঠতে হয় বিরামপুর অথবা জয়পুরহাট স্টেশনে গিয়ে। বর্তমানে চিলাহাটি-রাজশাহী বরেন্দ্র এবং তিতুমীর এই দুটি ট্রেন এখানে দাঁড়ায়। গত ১ মে থেকে মাষ্টার শূন্যতার কারণে ট্রেন যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 


ট্রেনযাত্রী ইসমাইল হোসেন বলেন, হিলি স্থলবন্দরে একটিই রেলস্টেশন। এই স্টেশন থেকে আমদানি-রপ্তানিকারক, রাজশাহীগামী শিক্ষার্থীরাসহ সাধারণ যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করে থাকেন। এখানে নেই যাত্রী ছাউনি, পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থা, টয়লেট ও বিশ্রামাগারসহ নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। তার সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে প্ল্যাটফরমবিহীন লাইনে ট্রেন দাঁড়ানো। এতে আমাদের ট্রেনে উঠতে খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।


আরেক যাত্রী মোছা রুমানা আক্তার বলেন, শুনেছি হিলিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন স্টেশন মাস্টার কর্মরত ছিলেন। তখন এখানে ট্রেনগুলো থামতো প্ল্যাটফরমযুক্ত ১ নম্বর লাইনে। আমরাও অনায়াসে ট্রেনে ওঠানামা করতে পারতাম। শনিবার (৬ মে) টিকেট কাটার পর দেখতে পাচ্ছি ট্রেন ২ নম্বর লাইনে দাঁড়িয়েছে।  বাচ্চা ও লাগেজ নিয়ে ট্রেনে উঠতে খুব কষ্ট হয়েছে।


রাজশাহীগামী শিক্ষার্থী শিহাব আহমেদ বলেন, আমি রাজশাহিতে লেখাপড়া করি। ছুটিতে বাড়িতে এলে বরেন্দ্র ট্রেনে রাজশাহী যাই। আজ শুনছি ট্রেন ২ নম্বর লাইনে দাঁড়াবে। আর ২ নম্বর লাইনে কোনো প্লার্টফরম নেই। তাই কষ্ট করে ব্যাগসহ মালামাল নিয়ে ট্রেনে উঠতে হবে।


এলাকাবাসী মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘হিলি রেলস্টেশনে একজন অস্থায়ী স্টেশন মাস্টার ছিলেন।  গত ৩০ এপ্রিল কর্মরত অস্থায়ী মাস্টার চলে গেছেন। এখন স্টেশনটি মাস্টারশূন্য হয়ে পড়েছে। শুধু একজন বুকিং সহকারী আর ৩ জন স্টাফ দিয়েই চলছে এই স্টেশন। মাস্টার না থাকায় উত্তরে বিরামপুর ও দক্ষিণে পাঁচবিবি রেলস্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে হিলি রেল স্টেশনটি। ট্রেন ইচ্ছেমতো ২ নম্বর লাইনে দাঁড়াচ্ছে, আবার ছেড়ে যাচ্ছে। তাই টিকিট কাটার পর ট্রেনে ঝুলন্ত অবস্থায় উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেকে তাড়াহুড়োর কারণে ট্রেনে উঠতে পারছেন না। 


হাকিমপুর হিলি পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, হিলি স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। আন্তঃনগর ট্রেন না দাঁড়ানোর কারণে অনেক আমদানি রফতানি কারককে বিরামপুর অথবা জয়পুরহাট স্টেশনে নেমে হিলিতে আসতে হয় এবং যেতে হয়। এতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট বার বার আবেদন করেছি কিন্তু কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। এমনকি রেল মন্ত্রী'র নিকট মৌখিক ও লিখিত আবেদন করেও কোন সুরাহা পাইনি। এখানে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান তিনি। 


হিলি রেলস্টেশনের বুকিং সহকারী মো. সুজন মিয়া বলেন, হিলি রেলস্টেশনে বর্তমানে ১ নম্বর লাইনের পরিবর্তে ২ নম্বর লাইনে ট্রেন চলছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। গত ৩০ এপ্রিল থেকে কর্তব্যরত অস্থায়ী মাস্টার রিজাইন দিয়ে চলে গেছেন। আমি শুধু  টিকিট বিক্রি করছি। তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত স্টেশন মাস্টার নিয়োগ দেবে।  আশা করি, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।