কালের স্বাক্ষী আশাশুনির বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালিমন্দির

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: শনিবার ৫ই মার্চ ২০২২ ০৫:৩৭ অপরাহ্ন
কালের স্বাক্ষী আশাশুনির বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালিমন্দির

সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী বুধহটা দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দির।তৎকালীন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী গ্রামের জমিদার রাজা রাজ বংশী ১১৪৬ সনে এ মন্দির টি প্রতিষ্ঠা করেন।কথিত আছে জমিদার রাজ বংশী খাজনা আদায়ের জন্য বজরা বা নৌকা যোগে বুধহাটায় কাছাড়ীতে আসতেন।


একদিন খাজনা আদায়ের প্রাক্কালে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন।সে সময় আদিষ্ট হয় “মা বলছেন রাজ বংশী আমি তোর হাতে এ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হবো।আমি নদীতে ভেসে ভেসে চলছি।তুই আমাকে ধারন করে প্রতিষ্ঠিত কর। 


জমিদার ঘুম ভেঙ্গে দেখেন তখন রাত্র দ্বিপ্রহর।তিনি নদীর ধারে ছুটে গিয়ে দেখেন পূজা উপাচারে সজ্জিত একটি ঘট ভেসে যাচ্ছে।সে দিন ছিল চৈত্র মাসের শেষ মঙ্গল বার।তিনি ঘট তুলে এনে ঐ দিনই পূজা করেন এবং মন্দিরের ভিত স্থাপন করেন।সেখান থেকে আস্তে আস্তে মন্দিরের মাহাত্ম্য চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।লোকজন তাদের মনোষ্কামনা পূরনে নিত্য পূজা দিতে শুরু করেন। প্রতিষ্ঠিত হয় বুধহাটা দ্বাদশ শিব ও কালী মন্দির।


তৎকালীন একই স্থানে ১২ টি মন্দির টি ভক্তদের যেমন করে ভক্তিআতুর তেমনি পর্যটকদের করে ভ্রমনে উৎসাহিত।


ঐতিহ্য বাহী মন্দির টি পরিচালনা করারজন্য জমিদার ৭৪ একর জমি দান করেন।কালের আবর্তে এখন আছে মাত্র ২.০৩ একর।এ ২.০৩ ্একরের মধ্যে গরুর হাট বসালেও সেখান থেকে মন্দির পরিচালনার জন্য কোন অর্থ পায় না।১৯৭১ সালে মন্দির টি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু আজও পর্যন্ত মন্দির সংস্কারের জন্য কোন অনুদান পায় নি।


২০২০ সালের হিন্দু কল্যা ট্রাষ্টের ১০ লক্ষ টাকার একটি অনুদান পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন থাকলেও আজও তা পাওয়া যায় নি।১৯৭৬ সালের দিকে নওয়াপাড়া গ্রামের দ্বীনবন্ধু সরকার ও মহাজনপুর গ্রামের কার্ত্তিক দেবনাথ,রমেশ দেবনাথ মন্দির টি সংস্কার শুরু করেন। 


কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ের সংস্কার বেশী দূর এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি।পরবত্তীতে সাংবাদিক সচ্চিদানন্দদেসদয়ের তত্বাবধনে নবজাগরনী সাংস্কৃতিক সংঘ মন্দিরটি রক্ষা করার ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায়।১২ টি মন্দির পাশা পাশি অবস্থিত থাকলেও এখন মাত্র ছয়টি মন্দির অবশিষ্ট আছে।মন্দিরে ১২ টি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ থাকলেও এখন আছে ২ টি। বিভিন্ন সময়ে মন্দির থেকে শিব লিঙ্গ গুলো চুরি হয়ে যায়।


বুধহাটা মন্দিরের পুরোহিত বিকাশ ব্যানার্জী বলেন এখানে চৈত্র মাস ব্যাপী বিভিন্ন উপাচারে শিব পূজা ও জল প্রদান করা হয়।তা ছাড়া প্রতি বছর শিবরাত্রি,জন্মাষ্টমী,নাম যঞ্জ,জগদ্বাত্রী পূজা,সরস্বতী পূজা,নিত্য পূজা অনুষ্ঠিত হয়।


অভিঞ্জ মহল মনে করেন,বুধহাটা দ্বাদশ শিবকালী মন্দিরের স্থাপত্য,অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ।সরকারী সহায়তার অভাবে এই প্রাচীন নির্দশন টি মরতে বসেছে।এটি সংস্কার ও সংরক্ষনের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।