জুমার দিনের মর্যাদাপূর্ণ আমল ও প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৭ই জুন ২০২২ ১০:১০ পূর্বাহ্ন
জুমার দিনের মর্যাদাপূর্ণ আমল ও প্রস্তুতি

গরিবের হজের দিন জুমা। সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিনও এটি। জুমার নামাজের প্রস্তুতিতে করণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ করণীয় ও ফজিলতপূর্ণ আমলগুলো তুলে ধরা হলো-


জুমার দিন যা করবেন

১. জুমার দিন মসজিদে যাওয়ার আগে গোসল করা;

২. উত্তম পোশাক পরা;

৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা;

৪. জুমার নামাজ আদায়ের জন্য মসিজদে যাওয়া;


৫. মসজিদে কাউকে অতিক্রম করে বা ঘাড় টপকিয়ে সামনে না যাওয়া;

৬. যেখানে জায়গা পাবেন সেখানেই বসে যাওয়া;

৭. মনোযোগ সহকারে ইমামের খুতবা বা বক্তব্য শোনা;


৮. খুতবা বা বক্তব্য চলাকালীন সময়ে নীরবতা পালন করা;

৯. বিশেষ করে ছানি (দ্বিতীয়) খুতবায় ইমামের সঙ্গে দোয়ার সময় ‘আমিন’, ‘আমিন’ বলা;

১০. জুমার দিন নামাজের আগে ‘সুরা কাহফ’ পুরোপুরি তেলাওয়াত করা। সম্ভব না হলে দিনের যে কোনো সময় তেলাওয়াত করা।


১১. জুমার নামাজের আগেই চুল, গোফ, নখ কেটে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া।

১২. জুমার দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত মসজিদে অবস্থান করা।

১৩. বেশি বেশি দরূদ শরিফ পাঠ করা।

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত

যারা এ কাজগুলো সুন্দরভাবে পালন করবে, তাদের এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত যাবতীয় গোনাহের কাফফার হয়ে যাবে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় জুমার দিনের ফজিলত ও মর্যাদা ওঠে এসেছে-


১. হজরত ইবনু আওস আস সাক্বাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে এবং (স্ত্রীকেও) গোসল করাবে, ভোরে ঘুম থেকে উঠবে এবং অন্যকে ঘুম থেকে উঠাবে; জুমার জন্য বাহনে চড়ে নয়, বরং পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং কোনোরূপ অনর্থক কথা না বলে ইমামের নিকটে বসে খুতবা শুনবে; তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতি পদক্ষেপ সুন্নাত হিসেবে গণ্য হবে। আর প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময় সে এক বছর যাবত সিয়াম পালন ও রাতভর নামাজ আদায়ের (সমান) প্রতিদান পাবে। (আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিজি)


২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন জানাবাতের (অপবিত্রতার) গোসলের ন্যায় (ভালোভাবে) গোসল করে সর্ব প্রথম জুমার নামাজের জন্য মসজিদে চলে আসবে, সে একটি উট কুরবানির ছওয়াব পাবে।

আর যে ব্যক্তি তার পরে আসবে, সে একটি গাভি কুরবানির ছওয়াব পাবে।

তার পর তৃতীয় নম্বরে যে আসবে সে একটি ছাগল কুরবানির ছওয়াব পাবে।

তারপর চতুর্থ নম্বরে যে আসবে সে একটি মুরগি কুরবানির ছওয়াব পাবে।

তারপর পঞ্চম নম্বরে যে আসবে সে আল্লাহর পথে একটি ডিম সাদক্বাহ করার ছওয়াব পাবে।

অতঃপর ইমাম যখন খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসেন তখন মালিয়া তথা ফিরিশতারা খুতবা শোনার জন্য উপস্থিত হন।’


৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আরো তিন দিনের গোনাহ কাফফার হয়ে যাবে। কেননা নেক কাজের ছওয়াব দশগুণ হয়।’


৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টি কোনো মুসলিম বান্দা যদি নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই তিনি তাকে (চাহিদা মোতাবেক) দান করেন। তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সেই সময়টিই খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারি)


৫. কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, সেই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে।

৬. কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, ইমামের বসা থেকে নামাজ শেষ করার মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সেই সময়টি রয়েছে।


আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের করণীয় কাজগুলো যথাযথ পালনের মাধ্যমে জুমার উল্লেখিতি ফজিলতগুলো লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।