বরিশালের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের মাঝে ছাঁটাই আতংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শনিবার ৩রা এপ্রিল ২০২১ ০১:০৭ অপরাহ্ন
বরিশালের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মীদের মাঝে ছাঁটাই আতংক

মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জরুরী কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্যান্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে অফিস করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বরিশালে এখনো তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।


অনেক অফিস ও কলকারখানা এখনো পুরো জনবল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। অবশ্য অনেক প্রতিষ্ঠান মৌখিক কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও রপ্তানীমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশংকায় সরকারি নির্দেশনা এ মূহুর্তে মানতে পারছেন না। 


তবে এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রতিষ্ঠান মালিকদের নিয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরিশালের ডিআইজি হিমন কুমার সাহা। অপরদিকে সরকারী এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে বরিশাল জেলা প্রশাসনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


এদিকে সরকারি এ নির্দেশনা জারী হওয়ার পরপরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বরিশালের বিভিন্ন কলকারাখানা ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের মধ্যে। কেননা করোনা ভাইরাস আক্রমনের পরপরই বিশে^র বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাটাই করে।


মূলত প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যাওয়ায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান মালিক ও কর্মচারীরা। তবে এবার ৫০ ভাগ জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনার নির্দেশনা জারীর পর চাকরি হারানোর কোন আশংকা নেই বলে দাবী ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের।


হঠাৎ করেই বাংলাদেশে করোনায় শুধু আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যাই বাড়ছে না, কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন করোনার আতঙ্ক তাড়া করছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকায় অনেক বড় হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়ছে বিশ্ববাজার।


ইতিমধ্যেই ভাটা পড়ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। চাকরি হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে বেকারত্বের হার। পৃথিবীতে সব দেশে একযোগে চলছে ছাঁটাই, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুতি। 


করোনা প্রতিরোধে ৫০ ভাগ জনবল দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানোর ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা জারী এবং করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য নিম্নমুখী হওয়াতে কর্মীরা চাকরি হারানোর আতঙ্কে ভুগছেন। মাত্র একজনের চাকরির অর্থ উপার্জন দিয়ে গোটা পরিবার চলে এমন পরিবারের সংখ্যা আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি। সেই চাকরি খোয়া গেলে অন্য কিছুর হাল ধরবে, এমন কোন পরিস্থিতি বর্তমানে নেই। 


নগরীর বিসিক শিল্প নগরীর একটি বিস্কুট ফ্যাক্টরীতে কাজ করা শ্রমিক রুম্মান জানান, পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে তার সংসার। উপার্জনক্ষম বলতে শুধু তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাকরি হারালে পথে বসতে হবে। 


কারিকর বিড়ি ফ্যাক্টরীর শ্রমিক বিউটি জানান, তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে দিনে সর্বোচ্চ আড়াইশ টাকা আয় করতে পারেন তিনি। স্বামী পরিত্যক্তা বিউটি বলেন, শ্রমিক ছাটাই হলে অনেককেই না খেয়ে থাকতে হবে। 


বরিশাল বেঙ্গল বিস্কুট ফ্যাক্টরীর ব্যবস্থাপক মোঃ রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কলকারখানা অধিদপ্তর, বিসিক মালিক সমিতি বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা পাননি। সরকারি নির্দেশনা প্রশ্নে তিনি বলেন তাদের কোন কর্মীকে ছাঁটাই করা হবে না। প্রয়োজনে দুই শিফটে ভাগ করে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। 


বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী সমিতির আহবায়ক শাওন খান বলেন, গত লকডাউনের মধ্যেও বিসিকের সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খুব শীঘ্রই তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিয়ে সভা করে সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে রপ্তানীমুখী প্রতিষ্ঠান তাদের বিদেশী অর্ডার বাতিল হওয়ার শংকায় রয়েছে।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকেই ছাঁটাই করা হবে না। সরকারি নির্দেশনা মেনে শিফটিং পদ্ধতি বা বয়স্ক লোকদের ছুটিতে রেখে কারখানাগুলো চলতে পারে। অবশ্য ছুটিতে থাকলেও ওইসব শ্রমিকদের বেতন নিশ্চিত করার কথা বলেন তিনি।


কলকারাখান ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরিশালের ডিআইজি হিমন কুমার সাহা বলেন, রোটেশান পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান চালাবে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে যেমনঃ নির্দিষ্ট জনবল ব্যতীত কোন মেশিন যদি চালানো সম্ভব না হয় তাহলে উৎপাদন কার্যক্রম চালাতে সে ব্যাপারে শিথিলতা থাকবে।


তিনি বলেন, বরিশালের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মালিকদের নিয়ে আলোচনা করে এ বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মূলকথা হচ্ছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি যাতে সকল প্রতিষ্ঠানে মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে। 


এ ব্যাপারে জানতে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।