বিদ্যুৎখাতে চুরির কারণেই মহা বিপর্যয়: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার ৫ই অক্টোবর ২০২২ ০৭:০৬ অপরাহ্ন
বিদ্যুৎখাতে চুরির কারণেই মহা বিপর্যয়: মির্জা ফখরুল

দেশে বিদ্যুৎখাতের কারিগরি ব্যবস্থাপনায় চুরির কারণে গ্রিড বিপর্যয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


মঙ্গলবার জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে দুপুর থেকে প্রায় ৬ ঘণ্টা রাজধানীসহ দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা বিদ্যুৎহীন থাকার ব্যাপারে বুধবার দুপুরে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।


তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি যে, এটা সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা। বিদ্যুৎখাতে কারিগরি পর্যায়ে টোটালি চুরি হয়েছে বলে এই বিপর্যয় ঘটেছে। আমাদের টুকু সাহেব এটা বলেছেন। শুধু বিদ্যুৎখাতেই নয় সবক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। আমি মনে করি, এর জন্য মূলত দায়ী অপরিকল্পিত বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা।'


মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার চিৎকার-চেঁচামেচি করছে যে, আমরা বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি, প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত উৎপাদনও হচ্ছে। আমরা সেমিনারে বলেছি, কোথায় সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু গতকালের ব্যাপারটা ছিল অস্বাভাবিক ব্যাপার। টোটাল ব্ল্যাক আউটের মতো হয়ে গেছে।'


'এ থেকে যেটা বোঝা যায় সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে বহু প্রজেক্ট করেছে, টাকা পয়সাও বানিয়েছে। বানিয়ে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেছে, সব কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে… জাতিকে অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে।


আজ বুধবার দুপুরে আসাদ গেট এলাকায় দলের স্থায়ী কমিটির অসুস্থ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে দেখতে যান মির্জা ফখরুল ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।


পরে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।


বিএনপির আমলের সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, 'সারা দেশে যে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর কোনোটা নতুন প্রযুক্তির আবার কোনটা পুরোনো। এগুলোর মধ্যে সিনকোনাইজ করা সম্ভব না।'


এই সরকারের আমলে বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ শুধু উৎপাদন করলে চলে না। ট্রান্সমিশনে লাগবে, ডিসট্রিবিউশনে লাগে—এগুলোর কিন্তু খুব একটা উন্নতি হয়নি। খালি বিদ্যুৎ প্রকল্প বানিয়ে গেছে। এ কারণে আজকে এটা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটা আরও হবে কারণ সিনক্রোনাইজ করেনি।'


তিনি বলেন, 'রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো পুরনো মেশিন। পুরোনো মেশিন আর নতুন যেগুলো আছে সেগুলো এক না। কখনো না কখনো দেখা যাবে একটা ট্রিপ করলে সবগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। সিনক্রোনাইজ করতে পারবে না।'


বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন কীভাবে করবে জানতে চাইলে টুকু বলেন, 'একবারে প্রাইভেটাইজ জেনারেশন করা যাবে না। করলে সাধারণ মানুষের জন্য প্রাইস করা কঠিন হয়ে যাবে। আমরা মিক্সড করব।'


'আমাদের যে পলিসি ছিল ৩০ শতাংশ বেসরকারি এবং ৬০ শতাংশ সরকারে থাকবে—এভাবে আমরা বিদ্যুতের উন্নয়ন করব। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চালন ও বিতরণ সমন্বয় করব। যাতে সমস্যা না হয়।'


'এই সরকার এখন বোঝা'


মির্জা ফখরুল বলেন, 'সবচেয়ে বড় জিনিস যেটা যে, কোথাও তো কোনো জবাবদিহি বেই। নির্বাচিত সংসদ নেই। আপনি যে প্রশ্ন করবেন, কোথাও যে জবাব চাইবে সেই জবাবটাও চাইতে পারছেন না। যেহেতু জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায় নেই, দায়িত্বশীলতা নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলো ঘটছে। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় তারই একটা প্রমাণ।'


'সেই কারণে কিন্তু আমরা বার বার করে বলছি যে, এই সরকার এখন দেশের উপরে বোঝা হয়ে গেছে। এই সরকারকে না সরালে এই জাতির অস্তিত্বই টিকে থাকা মুশকিল হবে।'


তিনি বলেন, 'এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই রাস্তা। সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। সেই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প পথ নেই।'