হিজাব না খোলায় পরীক্ষা বাতিল, সহায়তা না পেয়ে হতাশ অন্তঃসত্তা নারী শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
আরিফুল ইসলাম মহিন -খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: শনিবার ১৪ই ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:২৪ অপরাহ্ন
হিজাব না খোলায় পরীক্ষা বাতিল, সহায়তা না পেয়ে হতাশ অন্তঃসত্তা নারী শিক্ষার্থী

মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজে হিজাব না খোলায় এক অন্তঃসত্তা নারী শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করার অভিযোগ উঠেছে। ২০২১ সেশনের ৩য় ও ৪র্থ সেমিস্টারের পরীক্ষার্থী উম্মে আন্জুমানয়ারা নামের ওই শিক্ষার্থী, যিনি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে সাহায্য চাইলেও কোনো সহযোগিতা পাননি।


ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার বিকেল ২টায় যখন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) এর সমাজতত্ত্ব-২ এর পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালে, কলেজের গণিতের শিক্ষক আবুল হোসেন পরীক্ষার খাতায় স্বাক্ষর করতে এসে উম্মে আন্জুমানয়ারাকে তার হিজাব খুলে মুখ দেখানোর জন্য বলেন। শিক্ষার্থী জানালে যে, তিনি মহিলা শিক্ষককে সামনে মুখ খুলবেন, তবে আরেক শিক্ষক আবুল বাশার মিয়াজি তাকে পরীক্ষা হল থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। পরবর্তীতে, অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন মজুমদারও তাকে হল থেকে বের করে দেন, যদিও শিক্ষার্থী তার পরীক্ষায় অংশ নিতে চেয়েছিলেন।


এসময় উম্মে আন্জুমানয়ারা ৯৯৯ এ ফোন করে সহযোগিতা চাইলে মাটিরাঙ্গা থানার ওসি ও একটি পুলিশ টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি। পুলিশ শিক্ষার্থীকে কলেজ থেকে বের করে দিলে গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। 


অন্তঃসত্তা ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, "আমি সব সময় হিজাব পরে আসি, আমার কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু আজ আমাকে হেনস্থা করা হয়েছে। শিক্ষকরা আমার পরীক্ষা বাতিল করেছে, আমাকে অপমান করেছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।" 


মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হারুনুর রশিদ বলেন, "হিজাব খুলে মুখ দেখানোর প্রয়োজন ছিল না। এই ঘটনা আল্লাহর ফরজ বিধান পর্দাকে অবমাননা করার মতো। শিক্ষার্থীর সম্মান রক্ষা না করা শিক্ষক সমাজের জন্য একটি বড় দুঃখজনক ঘটনা।"


মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার্স ইনচার্জ তৌফিকুল ইসলাম জানান, তিনি পুলিশ টিমসহ কলেজে পৌঁছালেও শিক্ষার্থীকে সাহায্য করা সম্ভব হয়নি, কারণ কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে ফেলেছিল।


এদিকে, মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন মজুমদার ফোন রিসিভ করেননি এবং কোনো উত্তর দেননি। 


মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আলম জানান, তিনি বিষয়টি জানার পর শিক্ষার্থীকে ডেকেছেন এবং আগামীকাল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। 


খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, "এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।"