গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার হরিণহাটি এলাকায় মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বেপরোয়া গতির একটি মালবাহী ট্রাকের চাপায় দুই পোশাক কারখানার শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আরও তিনজন শ্রমিক গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ট্রাকটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং মহাসড়ক অবরোধ করে, ফলে ওই সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের বিরতির সময় স্টারলিং কারখানার শ্রমিকরা খাবার খেতে বের হন। এই সময়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অতিক্রম করছিলেন। হঠাৎ করে উত্তরবঙ্গগামী একটি মালবাহী ট্রাক বেপরোয়া গতিতে এসে তাদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শ্রমিকের মৃত্যু হয়, এবং আরও তিনজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। নিহত শ্রমিকরা স্টারলিং কারখানার কর্মী ছিলেন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে ভয়াবহ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নিহতদের সহকর্মীরা ও স্থানীয় জনতা দ্রুত ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ট্রাকটি আটক করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে ট্রাকটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায় এবং মহাসড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন, ফলে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে শ্রমিকদের বিক্ষোভ এতটাই তীব্র ছিল যে, পরিস্থিতি শান্ত করতে সময় লাগে। বিক্ষোভের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হন।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, "আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সাথে আলোচনা চলছে যাতে তারা সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেয়।" তিনি আরও বলেন, "দুর্ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।"
দুর্ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং স্থানীয় মানুষজনও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বেপরোয়া ট্রাক চালনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, মহাসড়কে গাড়ির গতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটতে পারে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা গাজীপুরের পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে শোক ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। নিহত ও আহত শ্রমিকদের সহকর্মীরা এবং তাদের পরিবারবর্গ বিচারের দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন।
বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।