নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন বিতর্কিত দেওয়ানবাগী পীরের আস্তানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার ফজরের নামাজের পরপরই এই সহিংস হামলার ঘটনা ঘটে, যা এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে একদল আক্রমণকারী দেওয়ানবাগী পীরের আস্তানায় প্রবেশ করে এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আক্রমণকারীরা আস্তানার দরজা-জানালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও দামী সামগ্রী ভেঙে ফেলে। এরপর তারা আস্তানায় আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে মুহূর্তের মধ্যে পুরো স্থাপনাটি আগুনে জ্বলে ওঠে।
ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্দর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়, তবে ততক্ষণে আস্তানার একটি বড় অংশ পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, "আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তবে আগুনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং দামী আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।"
এই সহিংস ঘটনার পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনার পর নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং আরও কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়াতে বন্দর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বন্দর থানার ওসি (অফিসার ইন চার্জ) জানান, "আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি। বর্তমানে আস্তানার ভেতর ও আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না ঘটে। এই হামলার পেছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত শুরু হয়েছে।"
দেওয়ানবাগীর অনুসারীরা এই হামলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এই নৃশংস আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন। দেওয়ানবাগীর এক অনুগামী বলেন, "আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করছিলাম, কিন্তু এই হামলা আমাদের ভয়াবহ এক আতঙ্কের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচার এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।"
ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করেন, দেওয়ানবাগীর আস্তানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কই এই হামলার মূল কারণ। দেওয়ানবাগী পীরের কর্মকাণ্ড এবং তার অনুসারীদের আচরণ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ ছিল, যা অবশেষে এই সহিংসতায় রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পুরো এলাকাজুড়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আস্তানার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করার জন্য কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, এই হামলা থেকে ভবিষ্যতে আরও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, হামলার পেছনে কারা জড়িত এবং তাদের উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং দোষীদের দ্রুত খুঁজে বের করার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।