লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত আফনান পাটওয়ারী ও সাব্বির হোসেন রাসেলের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের হত্যার বিচার চেয়ে থানায় মামলা করে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের হুমকিতে এখন প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। বাসায় তালা ঝুলিয়ে অন্য স্থানে থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে দুই পরিবার সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।এদিকে আফনান ও সাব্বিরের সহপাঠীরা তাদের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই ভুলতে পারছেন না। তারাও হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেছেন।
শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার আফনানের বাসায় তালা ঝুলতে দেখা গেছে। আশপাশের লোকজন বলছেন, তারা বাড়িতে নেই। ভয়ে বাড়িছাড়া আফনানের মা ও একমাত্র বোন। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় (আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায়) প্রায় ১ ঘণ্টা পর গোপন ঠিকানা থেকে বাড়িতে আসেন তারা। এ সময় আফনানের সহপাঠীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার মা ও বোন।
আফনানের মা নাছিমা আক্তার বলেন, ৩ মাস আগে আমার স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা গেছেন। সেই শোক সইতে না সইতে আমার ছেলেকে হারালাম। তারা (সন্ত্রাসীরা) আমার মেধাবী ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। আমরা মামলা করেছি। এখন বিভিন্ন ফোন থেকে আমাদের আত্মীয়স্বজনকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কার কাছে যাব। সরকারের কাছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবি জানিয়ে তাদের দেখার আর কেউ নেই বলে অচেতন হয়ে পড়েন নাছিমা।
তার পাশে থাকা আফনানের বোন জান্নাতুল মাওয়া বলেন, আদরের ভাইটিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতাম। ৩ মাসের ব্যবধানে বাবা ও ভাই হারিয়েছি। স্মৃতি হিসাবে রয়ে গেছে আফনানের সাইকেল। তবে সরকারের কাছে ভাই হত্যার কঠোর বিচার দাবি করেন তিনি।।
আফনানের সহপাঠীরা বলেন, প্রাইভেট পড়তে গিয়ে বইখাতার ব্যাগ কাঁধে নিয়েই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যান আফনান। হঠাৎ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। সহপাঠী এক শিক্ষার্থীকে (ছাত্রী) বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় আফনান। একপর্যায়ে সে মাদাম ব্রিজের ওপর লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে আফনান মারা যায়। নিহত আফনান লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে (চলমান) এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।
এদিকে আন্দোলনে নিহত আরেকজন সাব্বির হোসেন রাসেল। শহরের মনির উদ্দিন পাটোয়ারী বাড়ির নানার বাড়িতে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে আসছিলেন তিনি। এইচএসসি পাশ করে দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ৪ আগস্ট আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাব্বির।
১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে তার স্ত্রী তর্না আক্তার বলেন, আমার স্বামী পৃথিবীতে নেই ভাবতেই কষ্ট লাগে। তার শরীরে ৩২টি গুলি করা হয়েছে। যারা গুলি করেছে তাদের বিচার চাই। শিশুটি নিয়ে বাঁচতে ও জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকারি সহায়তা চান তিনি।
সাব্বিরের মা মায়া বেগম বলেন, আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। ছাব্বির সবার বড় ছিল। এখন ছেলেটা আর নেই, আর ফিরবেও না কোনোদিন। তার রেখে যাওয়া বইখাতাগুলো স্মৃতি হয়ে আছে। সাব্বিরের হত্যাকারী তাহেরপুত্র টিপু ও ছাত্রলীগ নেতা শাহীনসহ সবার বিচার চান মায়া বেগম।
১৪ আগস্ট রাতে আফনানের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৭০০ জন এবং সাব্বিরের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ৯১ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা করেন। দুটি মামলাতেই সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। টিপু ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহিন আলমের শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।