কঠোর আইন আছে কৃষি জমির মাটি কাটা যাবে না। পুকুর খননের মাটি পুকুর পাড়ে রাখতে হবে। এলজিইডির গ্রামীন সড়কের ক্ষতি হয় সে জন্য মাটি নিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। আইন ভঙ্গ করলে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও জেলের বিধান রয়েছে। কিন্ত এ সব আইন আর বিধি নিষেধ কেবল কাগজে, বাস্তবে নেই।
ঝিনাইদহ জেলায় শীত মৌসুম আসলে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে যায়। গ্রামে গ্রামে এখন মাটি বিক্রির ধুম পড়ে গেছে। কথিত আছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি সিন্ডিকেটের এই মহোৎসব চলছে। কিন্তু প্রতিকার নেই। বরং ধুমছে চলছে মাটি কেনাবেচার রমরমা বানিজ্য। ফলে ৬ উপজেলায় এলজিইডির গ্রামীন রাস্তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাকা রাস্তায় মাটি পড়ে বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে রাস্তা রক্ষার জন্য ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ১৯৫২ সালের বিল্ডিং কনষ্ট্রাকশন এ্যক্টের ৩ ধারা মতে একটি পরিপত্র জারী করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের (উন্নয়ন-২) উপ-সচিব জেসমিন পারভিন। ওই আইনের দন্ডবিধির ১৮৬০ এর ধারা ৪৩১ মোতাবেক সরকারী রাস্তার ক্ষতি সাধন ফৌজদারী দন্ডনীয় অপরাধ। এই আইনে ৫ বছরের কারাদন্ড, জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ফলে সরকারী রাস্তার ক্ষতি সাধন হয় এমন কাজ করা যাবে না।
অথচ আইন বাস্তবায়নে রহস্যজনক উদাসিন প্রশাসন।
সরজমিন তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমরাবাড়িয়া ধোপাবিলা গ্রামের জসিম নামে এক ব্যক্তি রাতের আধারে মাটি বিক্রি করছেন। কোন বিধি নিষেধ তিনি মানছেন না। মধুহাটী ইউনিয়নে নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দেদারছে মাটি কাটার অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার বাথপুকুর গ্রামের গাজী আব্দুল হালিম, একই গ্রামের পিকুল, আলী আকবর মেম্বর, দশমী গ্রামের সাইদ বঙ্গাল, মোহাম্মদজুমা গ্রামের উজ্জল, কোটছাঁদপুর উপজেলায় বলুহর বাসষ্ট্যান্ড পাড়ার আরাফাত, লক্ষিপুরের জিলানী, পাল্লা ফুলবাড়ির সাইদুল, দোড়া পাচলিয়া গ্রামের রাব্বি হাসান, শাহজাহান আলী, নারায়নবাড়িয়ার শরিফুল ইসলাম, তালসারের জাহিদ মেম্বর, বলুহর বারোমেসে ব্রীজের তরিকুল মাটি কেটে বিক্রি করছেন।
এদিকে মহেশপুরে করতোয়া নদীতে খননযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মাজহারুল হক ওরফে স্বপন। বালি তুলে তিনি নদীর কিছুটা দূরে রাখা হচ্ছে। যন্ত্র বসিয়ে এভাবে বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আশপাশের চাষের জমির ক্ষতি হবে বলে তাঁরা জানান।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর হুদোপাড়া গ্রামে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। বালি তোলা শ্রমিক আসাদুল ইসলাম, সোহেল হোসেন ও শাহিনুর রহমান জানান, চেয়ারম্যান তাঁদের চুক্তিতে এখানে এনেছেন। এখানে তিন সপ্তাহ হলো তাঁরা বালু তুলছেন। তাঁরা ৭৮ ফুট গভীর করে বালি তুলছেন। বালি তোলার সঙ্গে চেয়ারম্যান জড়িত থাকায় তাঁরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
এর আগে মহেশপুর উপজেলার বৈচিতলা বেড়ের মাঠ এলাকায় কপোতাক্ষ নদ থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে আলোচনায় আসেন স্থানীয় পৌর মেয়রের ভাই মনিরুল ইসলাম ওরফে মিন্টু খান মহেশপুর প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থায় নিতে পারেনি। এ বিষয়ে পান্থপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল হক বলেন, এই বালু তোলায় এলাকার কোনো ক্ষতি হবে না। ইউনিয়নে তাঁর বিপক্ষে একটি পক্ষ রয়েছে, যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। যে স্থানে বালু তোলা হচ্ছে, সেই স্থানের পাশের জমি তাঁর।
ফলে ভাঙন হলে ক্ষতি তারই হবে। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত নন। তবে এ জাতীয় ঘটনা থাকলে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
এদিকে জেলা প্রশাসনের একটি সুত্র জানায়, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকার হাজিপাড়ায় জনৈক হাবিবুর রহমান হাবিব ও সদর উপজেলার সাধুহাটী কৃষি ফার্মের পেছনে শহিদ নামে এক ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।