অন্যের স্ত্রী নিয়ে পালাতে গিয়ে ...

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. সোহেল
প্রকাশিত: সোমবার ২৪শে জানুয়ারী ২০২২ ০৯:০৫ অপরাহ্ন
অন্যের স্ত্রী নিয়ে পালাতে গিয়ে ...

রাতের আধারে অন্যের স্ত্রী নিয়ে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে পরকীয়া প্রেমিক । অতঃপর...শুরু হয় তুঘলকি কা-। প্রথমে গণপিটুনি। পরে শিকল দিয়ে বাঁধা হয় প্রেমিকের কোমড়। হাত বাঁধা হয় রশি দিয়ে। গলায় পরানো হয় জুতার মালা। একপর্যায় বসানো  হয়  শালিস বৈঠক। সেখানে নির্দেশ দেওয়া হয় বেত্রাঘাতের। ধার্য হয় জরিমানা। 


রোববার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা গ্রামে। গলায় জুতার মালা পরিয়ে রাখানোর এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘এমডি রুমান খান’ নামক  ফেসবুক একাউন্টে দুই মিনিটের দুইটি ভিডিও পাওয়া যায়।  


ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্য বয়সী ওই পরকীয়া প্রেমিকের গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে কোমড়। রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে  হাত। কিছু লোকজন তাকে ঘিরে রেখেছে। এদের মধ্যে একজন রশি, আরেকজন শিকল  ধরে রেখেছেন। আবার একজন এসে তার দুই গালে জুতা চেপে ধরে। এছাড়াও হয় অনেক কা-।  


জানা গেছে, পরকীয়া ওই প্রেমিকের নাম রিপন তালুকদার (৩৫)। গলাচিপা উপজেলার গোলখালী এলাকার সোহরাব তালুকদারের ছেলে সে। তার দুই সন্তান আছে। কিন্তু গত বছর রাঙ্গাবালীর চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা গ্রামে তরমুজ আবাদ করতে এসে তিন সন্তানের এক জননীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায় রিপন। রোববার রাত সাড়ে ১১ টায় ওই মহিলাকে নিয়ে ট্রলারযোগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকজন রিপনকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এরপর রিপনের গলায় জুতার মালা পরিয়ে শিকল এবং রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়।


সূত্রমতে, শেষ রাতে পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে নিয়ে চরলতা গ্রামের এক বাড়িতে শালিস বৈঠক বসানো হয়। এতে প্রধান শালিসের ভূমিকায় ছিলেন চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর (চিনাবুনিয়া-চরলতা) ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য জলিল ফকির। তিনিই পরকীয়া প্রেমিক এবং সহযোগীদের জরিমানা ধার্য করেন। কেউ বলছেন সেই জরিমানা এক লক্ষ। কেউ বলছেনÑএক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু জরিমানার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। 


চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর (চিনাবুনিয়া-চরলতা) ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য জলিল ফকির বলেন,  ‘স্থানীয় লোকজন মারধর করছে, এই পর্যন্তই। জুতার মালা পরাইছে কিনা ওইসময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমি অনেক পরে গেছি। ওই ছেলেকে তার পক্ষ নিছে। মেয়েকে স্বামী নেয়নি, মেয়ের বাড়ির লোকেরা নিছে। কিন্তু কোন  জরিমানা করি নাই। ওটা ওদেরকে এটা প্রেসারের (চাপে) মধ্যে রাখা হইছে। ওরকম আসলেই কিছু না। চেয়ারম্যান আমাকে যেভাবে বলছে, সেভাবে মিলাইয়া ঝিলাইয়া দিয়া আসছি। স্থানীয়ভাবে ম্যাচুয়াল করছি, আরও ৫-৭ জন ছিল। মহিলা মেম্বারের স্বামী বাবুল ছিল।’ একপর্যায় তিনি বলেন, ‘যারা মোবাইল নম্বর দিছে, যারা প্রশ্রয় দিছে তারা অপরাধী। মিলাইয়া ঝিলাইয়া একটা কিছু করছি। সামন্য কিছু হয়তো করা হয়েছে, ওটাও থাকবে না। ওটাও রাখা যাবে না পরে চিন্তা করছি। দুইজন চৌকিদার, পোলাপানের খরচ আছে। একরম একটা চিন্তা করছি নেওয়া যেতে পারে, ওরকম না ঠিক আছে।’   


শালিস বৈঠকে উপস্থিত থাকা চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আসমা বেগমের স্বামী বাবুল পহলান বলেন,  ‘শালিসে গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিল। যার ভাগে যেরকম বেত (বেত্রাঘাত) তাকে সেভাবে দেওয়া হয়েছে। ৩-৪ লাখ টাকা জরিমানার চিন্তা ভাবনা করছিল। কিন্তু পরে জরিমানা বাদ। বেত দেওয়া হয়েছে। ছেলের ৫০, মহিলার ১০০। আর তিনজনকে ১০টি করে বেত দেওয়া হয়েছে। এখানে একটু বিবেচনা করা হয়েছে। ছেলেটা ধরেই লোকজন পিটাইছে। তাই তাকে একটু কম বেত দেওয়া হয়েছে।’   এ প্রসঙ্গে জানতে চালিতাবুনিয়া ইউপির চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।  

এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী থানার ওসি দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে  দেখতেছি।’