কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক থেকে এবার পাওয়া গেল দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার টাকা যা আগের বারের চেয়ে কিছু কম। আজ শনিবার সকাল ৯টায় সিন্দুক খোলার পর গণনা শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এই হিসাব পাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ দানের এই নগদ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও বেশ কিছু স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে।
সবশেষ শনিবার (১৯ জুন) পাগলা মসজিদের দানবাক্স থেকে পাওয়া গেছে নগদ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। চমৎকার এর ইমারত আর নির্মাণশৈলী মন কাড়ে যে কারও। দৃষ্টিনন্দন এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র মুসলমানদের কাছেই নয়, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।
দেশের মানুষের কাছে অবাক বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানটির দানবাক্সে দানের টাকার পরিমাণ নিয়ে। মসজিদের বড় বড় লোহার সিন্দুকগুলো খোলা হয় তিন থেকে চার মাস পর পর। তাতে পাওয়া যায় কাড়ি কাড়ি টাকা, বিদেশি মুদ্রা আর স্বর্ণালঙ্কার। দেশ-বিদেশের অসংখ্য মানুষ এ মসজিদের মানত করতে আসেন। দান করেন নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়াও, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র।
সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খোলা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার ৪ মাস ২৬ দিন পর শনিবার (১৯ জুন) খোলা হয়েছে। সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের ৮টি দান সিন্দুক খোলা হয়। এর পর এগুলো বস্তায় ভরে মসজিদের দোতলায় গণনার কাজ শুরু করা হয়।
টাকা গণনা কাজ তদারকি করছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা মাজিস্টে্রট (এডিএম) ফরিদা ইয়াসমিন, নির্বাহী ম্যাজিস্টে্রট মো. জুলহাস হোসেন সৌরভ, মো. ইব্রাহীম, মাহামুদুল হাসান ও মো. উবায়দুর রহমান সাহেল, পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শওকত উদ্দিন ভূঞা প্রমুখ। টাকা গণনার কাজে মসজিদের কর্মকর্তা কর্মচারি ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা— কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদের সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম দুপুরে টাকা গণনার কাজ দেখতে মসজিদে যান। সেখানে তিনি বলেন, এই দানের টাকা দিয়ে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজসহ এ টাকা জেলার বিভিন্ন উন্নয়নেও লাগানো হয়। বর্তমানে মসজিদের হিসেবে ১৭ কোটি টাকা রয়েছে। এদিকে পাগলা মসজিদে টাকা গণনা দেখতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অনেকেই মসজিদে ছুটে যান। প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা—পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার দান করেন।
এছাড়া গবাদিপশু, হাঁস—মুরগীসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়। কথিত আছে, এই মসজিদে দান করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়। এ কারণে দূর—দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, আড়াইশ বছর আগেঈশাখাঁর শাসনামলে খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মাঝখানে পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক ব্যক্তি মাদুর পেতে ভেসে এসে মসজিদের কাছে আশ্রয় নেন। পরে ওই পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে মসজিদটি গড়ে উঠে। পাগলের নামানুসারে এটির নাম হয় পাগলা মসজিদ।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।