ন্যাশনাল সার্ভিসের টাকা আত্মসাত চেষ্টা : অভিযুক্তর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২৩শে জানুয়ারী ২০২১ ১২:২৫ অপরাহ্ন
ন্যাশনাল সার্ভিসের টাকা আত্মসাত চেষ্টা : অভিযুক্তর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা

ইউএনও’র স্বাক্ষর ছাড়া সাড়ে ১১ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করে আত্মসাত চেষ্টায় অভিযুক্ত গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসানের (সাবেক) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে পত্র (চিঠি) পাঠানো হয়েছে।


জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাঠানো ওই চিঠিতে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির ১৫৫ জন সুবিধাভোগীর ট্রেনিং ভাতার ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা উত্তোলনে নাজমুল হাসানের সঙ্গে তৎকালীন উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনের যোগসাজসের বিষয় উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে চিঠিতে মাদার (মুল) একাউন্টে জমা থাকা ওই টাকা সরকারী খাতে জমা প্রদানের বিষয়েও মতামত চাওয়া হয়েছে। 


যদিও ঘটনাটি ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের। তবে এতোদিন পুরো বিষয়টি গোপন ছিল। এমনকি বিষয়টি নিয়ে লিখিতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগ হলেও তা আজও তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেও গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে।


সম্প্রতি যমুনা টেলিভিশনে ন্যাশনাল সার্ভিসের ঊঁইপোকা শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারের পরেই অভিযুক্ত নাজমুল হাসানসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র পাঠানোর বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। 


শনিবার (২৩ জানুয়ারী) দুপুরে প্রেরিত ওই চিঠির কপি ও ব্যাংকের বিল-ভাউচার ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও রামকৃষ্ণ বর্মণ স্বাক্ষরিত (স্মারক নং ৩৫.৫৫.৩২৩০.০০১.০৫.১৩৭.২০.৭৪৯) ওই চিঠি গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর বিষয়টি একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। 


প্রেরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গোবিন্দগঞ্জে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির ৪০৬০ জন নির্বাচিত সুবিধাভোগীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৭ সালের ২ ডিসেম্বর। বিভিন্ন কারণে তালিকাভুক্ত ১৫৫ জন প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থাকেন।


কিন্তু যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান অনুপস্থিত ১৫৫ জনের স্থলে নতুন সুবিধাভোগী সংযোজনের চেষ্টা করেন। পরে ১৫৫ জনের প্রশিক্ষণ ভাতার ১১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ফেরত প্রদানে মৌখিক নির্দেশনা সত্বেও একক স্বাক্ষরে নাজমুল হাসান টাকা উত্তোলনে হিসাব রক্ষন অফিসে বিল দাখিল করেন।


তাৎক্ষণিক তৎকালিন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিনকে বিল পাশ না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের যোগসাজসে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বিলটি পাশ করে ব্যাংকে পাঠান। অথচ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সমস্ত বিল পরিচালিত হয়।


ইউএনও’র স্বাক্ষর ছাড়া দাখিল করা বিলের বিষয়টি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের নজরে এলে ওই টাকা উত্তোলন করতে পারেনি নাজমুল হাসান। বর্তমানে উক্ত টাকা সোনালী ব্যাংক হতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক গোবিন্দগঞ্জ শাখার মাদার (মুল) একাউন্টে জমা রাখার বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। 


চিঠিতে আরও বলা হয়, ওই অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত ব্যহতের ঘটনায় একাধিক অভিযোগকারী দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি দুদকে তদন্তাধীন রয়েছে। অর্থ উত্তোলনের চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পরেই নাজমুল হাসান তড়িঘড়ি করে বদলি নিয়ে সদর উপজেলায় যোগদান করেন।


নাজমুল হাসান কর্তৃক ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন পূর্বক আত্মসাত চেষ্টার অভিযোগ প্রমাণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া সুবিধাভোগীদের ট্রেনিং ভাতার ওই টাকা সরকারী খাতে জমার বিষয়েও মতামত এবং নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।