বরিশালে বিট পুলিশিং এর সুফল পাচ্ছে নগরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
এম. কে. রানা - বার্তা প্রধান ইনিউজ৭১
প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে জানুয়ারী ২০২১ ১২:২৯ অপরাহ্ন
বরিশালে বিট পুলিশিং এর সুফল পাচ্ছে নগরবাসী

মোগো স্যারে থাকতে আবার থানায় যাইতে অইবে ক্যা। হ্যাছাড়া মোগো বড় স্যারে প্রত্যেক মাসেই তো মোগো থানায় আয়” “হেহানে যাইয়াইতো মোরা স্যারের লগে সব কতা কইতে পারি। দ্যাহোনাই কুলসুমের বাহের জোমাজোমি লইয়া কি ঝামেলাই না অইছেলে।


স্যারের ধারে যাইয়া কইছে মোতন মামলা হরা লাগে নাই” “মোগো স্যার অনেক ভাল মানু”। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন কাউনিয়া থানাধীন শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের ষাটোর্ধ্ব মরিয়ম বেগম। পুলিশ বাহিনীকে আরো বেশি জনমুখী করতে,


মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছে দিতে সারা দেশে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে এসংক্রান্ত একটি কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বরিশালে শুরু হয়েছে বিট পুলিশিং কার্যক্রম।


‘আপনার পুলিশ, আপনার পাশে। তথ্য দিন সেবা নিন। বিট পুলিশিং বাড়ি বাড়ি, নিরাপদ সমাজ গড়ি’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) গত বছর সেপ্টেম্বরমাসে নগরীর ২০নং ওয়ার্ডে বিট পুলিশিং কার্যালয় উদ্বোধনের পরপরই বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকায় শুরু হয়েছে বিট পুলিশিং কার্যক্রম। বিএমপির চারটি থানাকে ১৯৭টি বিটে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি বিটে একজন উপ-পরিদর্শক পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা ও আরো পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন। 


বিট পুলিশিং হল কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক বা বিশেষ পুলিশ সদস্যদের স্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করা। আমাদের শহর এলাকাগুলোকে কয়েকটি বিটে ভাগ করে প্রত্যেকটি বিটের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারের উপর ন্যাস্ত করা হয়। ‘


বিট অফিসার তার বিট এলাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য, প্রতিবেশীর তথ্য, অপরাধীদের গতিবিধি, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করাসহ অনেক কাজে ভূমিকা রাখবেন।’ বিট এলাকায় কিছু পুলিশ অফিসার ঊর্ধতন


কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে নিজস্ব বিবেচনা শক্তি প্রয়োগ করে সেই এলাকায় পুলিশিং করে থাকেন। এক্ষেত্রে তিনি তার নির্ধারিত এলাকায় অপরাধ সমস্যা সমাধানে সহজতর হবে। 


বিএমপি’র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কমিউনিটি পুলিশের কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানো গেলেও এ কমিটি নিয়ে বিভিন্ন সময় সমালোচনা হয়েছে। যাদের দুর্নাম রয়েছে এমন লোকও কমিউনিটি পুলিশের নেতা হয়েছেন, নেতা হয়েছেন রাজনৈতিক দলের বিতর্কিত ব্যক্তিরাও।


আর কমিউনিটি পুলিশের মাধ্যমে জনগণ ও পুলিশের দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগের কথা বলা হলেও অনেক সময়ই ঝামেলা এড়াতে লোকজন পুলিশের কাছে যায় না। এসব কারণে আশানুরূপ ফল আনতে পারেনি কমিউনিটি পুলিশিং। তাই আইজিপি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএমপি কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান স্যারের নেতৃত্বে বরিশালে বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে।” 


তিনি আরো বলেন, বিট পুলিশিং-ই নয়, প্রত্যেক মাসে বিএমপি’র চারটি থানায় “ওপেন হাউজ ডে”, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং কার্যক্রমও শুরু হয়েছিল। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে ওই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিট পুলিশিং কার্যক্রম জনগণের সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছেন বলেন তিনি।


বিট পুলিশিং কার্যক্রম ইতোমধ্যে সারা ফেলেছে বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ক্রমেই প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে অপরাধ নির্মূল ও জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে বিট পুলিশিং। এর মাধ্যমে দ্রুত পুলিশি সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের। চলতি মাসে বিএমপি’র চারটি থানায় আয়োজিত ওপেন হাউজ ডে’ অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের বক্তব্যে তা উঠে এসেছে। 


কাউনিয়া থানাধীন শায়েস্তাবাদ বিট পুলিশিং কার্যালয়ে কথা হয় হায়াৎসার গ্রামের বাসিন্দা জব্বার মুন্সীর সাথে। তিনি বলেন, “মোগো এহানদিয়া থানায় যাইতে অইলে তিনশ টাহা লাগে, আবার সোমায়ও খরচ অয়”। স্যারেরা এহোন মোগো দরজায় আইছে। এহোন আর থানায় যাওন লাগে না”।


এয়ারপোর্ট থানাধীন মাধবপাশা গ্রামের বাসিন্দা রাবেয়া বেগম বলেন, “মোগো এলাকার পোলাপাইনডি বাবা-টাবা না কি যেন কয়, হেইয়া খাইয়া রাস্তার মধ্যে খারাইয়া মাইয়াগো ডিসটাপ করতে। থানার স্যারেরা এহোন ব্যান-বিয়াল থাহোনে অরা আর কেউরে ডিসটাপ করতে পারেনা।


বিএমপি বন্দর থানাধীন লাহারহাট এলাকার ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, থানা পুলিশ সব সময় উপস্থিত থাকে বলে এলাকায় চুরি, মাদক ব্যবসা অনেকটা কমে গেছে। কোতয়ালী মডেল থানাধীন পলাশপুরের বাসিন্দা পুতুল বেগম বলেন, পলাশপুর এক সময় মাদকের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল। কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী আগের তুলনায় এক নাই বললেই চলে।


নগরীর মথুরানাথ পাবলিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, বর্তমান পুলিশ কমিশনার বরিশালে যোগ দেয়ার পর থেকেই সুষ্ঠু ও সুন্দর নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে স্টুডেন্ট কাউন্সিলিং এবং বর্তমানে বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালু হওয়ায় স্কুল-কলেজ, অলিগলিতে বখাটেদের আড্ডা নেই। তাছাড়া অভিভাবকগণও আগের চেয়ে তাদের সন্তানদের প্রতি অনেক সচেতন হয়েছে।


বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান (বিপিএম-বার) বলেন, বিট পুলিশিংয়ের মূল ধারণা হচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তারাই সেবা নিয়ে যাবেন মানুষের কাছে। তবে মামলাসহ কিছু আইনগত বিষয়ে থানায় আসতে হবে। বিট পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডে, কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে জনমুখী গণমুখী পুলিশি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন,


“অপরাধ নির্মূলে স্থানীয় জনগণ, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের লোকজনকে সম্পৃক্ত করে মানবাধিকার সমুন্নত রেখে, নির্ভেজাল আইন প্রয়োগ করে অপরাধ দমন করার মাধ্যমে নিরাপদ নগরী গড়ে তুলতে চাই। এক্ষেত্রে জনসাধারণ পুলিশকে সহায়তা করলে অপরাধ সংগঠিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। পুলিশের সেবা পেতে জনসাধারণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার অনুরোধ জানান নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।