মুদি দোকান করে সংসার চলছে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকার!

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফুয়াদ হাসান রঞ্জু, উপজেলা প্রতিনিধি, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ২১শে জানুয়ারী ২০২১ ০৭:১৬ পূর্বাহ্ন
মুদি দোকান করে সংসার চলছে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষিকার!

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে সারাদেশের ন্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত হয় ৩৫টি কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল। এসব স্কুলে কর্মজীবী ৫'শ শিক্ষক-কর্মচারী বেতন-ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।


চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো এ উপজেলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছেন এসব শিক্ষক-শিক্ষিকারা। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন।


কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় অনেকে বিভিন্ন পেশার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এমনি এক শিক্ষিকা চন্দনা সাহার(৩৫)। যিনি ভূঞাপুর উপজেলার "গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে" সামান্য বেতনের চাকরি করেন। করোনার কারনে কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ থাকায় মুদি দোকান চালিয়ে সংসার চালান।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চন্দনা সাহা ভূঞাপুর উপজেলার "গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুল" (কেজি) স্কুলে চাকরি করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। সর্বশেষ ৩১ জানুয়ারি-২০২১ ইং পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে চরম হতাশায় পড়েন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।


কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষিকা চন্দনা সাহা জানান, আমি গত ৮ বছর ধরে গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলে সামান্য বেতনের চাকরি করি এবং স্বামী বিপ্লব সাহা একটি ফ্লেক্সিলোডের দোকান চালিয়ে যা রোজগার হতো তা দিয়ে আমাদের ৪ সদস্যের সংসার ভালোই চলতো।


গত ২ বছর আগে হঠাৎ আমার স্বামীর ব্রেইন স্ট্রোক হয়। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা খরচ হয় কিন্তু তাতে তার অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। তাছাড়া তিনি কাজ কর্ম করে কোন আয় রোজগার করতে পারে না।


কিন্ডারগার্টেনে চাকরি করে এবং টিউশনি করে যা পাই তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তার উপর প্রাণঘাতী করোনার কারণে কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ থাকায় সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কোন উপায় না দেখে বাড়িতেই কিছু টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে কোন রকম ভাবে সংসার চালাচ্ছি।


গোবিন্দাসী ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারি যাবতীয় কার্যক্রমের সঙ্গে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকরা জড়িত। বৈশ্বিক এ মহামারির কবলে পড়ে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েকশ শিক্ষক-কর্মচারী।


বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বেতন পরিশোধ না করায় স্কুল মালিকরা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছেন না। যার ফলে এমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমন দুর্দিনে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষকদের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।