হবিগঞ্জের বন্ধুকে খুনের দেড় বছর পর ৩ ঘাতক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আমিনুল ইসলাম আপন
প্রকাশিত: বুধবার ২৩শে ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৫ অপরাহ্ন
হবিগঞ্জের বন্ধুকে খুনের দেড় বছর পর ৩ ঘাতক গ্রেপ্তার

হবিগঞ্জের মাধবপুরের ব্যাটারি চালিত এক ইজিবাইক চালককে নারী নিয়ে ফুর্তি করার লোভ দেখিয়ে সাতছড়ী জাতীয় উদ্যানে নিয়ে খুন করেছে তার তিন বন্ধু। এ ঘটনায় পুলিশ ঘাতক তিন বন্ধুকে আটক করেছে। তারা হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে।


জানা যায়, আলমগীর মিয়া (২১), মুসলিম মিয়া (২২), মো. সোহেল মিয়া (৪০) ও মো. রোকন মিয়া (৩০) পরস্পরের বন্ধু ছিল। এর মধ্যে আলমগীর মিয়া ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। কিন্তু তার সেই ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের উপর নজর পড়ে বাকি তিন বন্ধুর। পরিকল্পনা করে বন্ধুকে খুন করে ইজিবাইকটি ছিনতাই করার।


পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ি ‘নারীর লোভ দেখিয়ে মাধবপুর উপজেলার পার্শ^বর্তী চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহীন অরণ্যে নিয়ে যায়। সেখানে গলায় রশি প্যাচিঁয়ে বন্ধুকে হত্যা করে ইজিবাইকটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় তিন বন্ধু।


ঘটনার কয়েকদিন পর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে চুনারুঘাট থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। কিন্তু লাশটি প্রায় ৯০ শতাংশ পচে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ডিএনএ পরিক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত হয় লাশের পরিচয়।সোমবার দিবাগত রাত হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা।


তিনি জানান, গত ২০১৯ সনের ১৭ জুলাই দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের গহীন অরণ্য থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু লাশের প্রায় ৯০ শতাংশ পঁচে যাওয়ায় সেটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।


মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তি এবং ফরেনসিক ল্যাব, ডিএনএ পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মৃতদেহের পরিচয় শনাক্ত হয়। তিনি মাধবপুর উপজেলার বনগাঁও গ্রামের রহমত আলীর ছেলে মো. আলমগীর (২১)।


পরবর্তীতে মৃত আলমগীরের ব্যবহৃত মোবাইলের সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে গত ১৮ ডিসেম্বর চুনারুঘাট থানা এলাকা থেকে মুসলিম মিয়া (২২) নামে এক ঘাতককে আটক করা হয়। সে মাধবপুর উপজেলার উত্তর বেজুড়া গ্রামের মো. ছফন উদ্দিনের ছেলে। আটককৃত মুসলিম মিয়া আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ সময় সে আদালতকে জানায় এ ঘটনার সাথে আরও দুইজন জড়িত থাকার কথা। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০ ডিসেম্বর বাকি দুই ঘাতক মো. সোহেল মিয়া (৪০) ও মো. রোকন মিয়াকে (৩০) আটক করে।


আটককৃত সোহেল মিয়া বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে এবং মো. রোকন মিয়া মাধবপুর উপজেলার খড়কী গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে। তারাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।


পুলিশ সুপার বলেন, ঘাতকরা আদালতকে জানায়- আটক সোহেল মিয়া, মো. রোকন এবং মুসলিম উদ্দিন নিহত আলমগীরের ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক (টমটম) ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ি আসামী সোহেল মিয়া নিহত আলমগীরকে ‘নারীর প্রলোভন দেখায়। আলমগীরকে সে জানায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে একটি মেয়ে রাখা হয়েছে।


তার প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে ইজিবাইক নিয়ে মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুর থেকে সাতছড়ি উদ্যানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মাঝ পথ থেকে টমটমে উঠেন রোকন ও মুসলিম উদ্দিন। সাতছড়ি উদ্যানের ভেতরে নিয়ে তিনজন মিলে আলমগীরকে গলায় রশি প্যাচিঁয়ে হত্যা করে ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।