কৃষকরা এক সময় যাদের বাড়িতে গরু, লাঙল ও জোয়াল ছিল, তারা ছিলেন এলাকার মূল কৃষক। গরু দিয়ে জমি চাষ, লাঙলে টানানো এবং মই দিয়ে জমি সমান করার কাজ ছিল গ্রামীণ কৃষির অংশ। তবে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বর্তমানে গ্রামে গরুর ব্যবহার কমে গেছে, আর তার ফলে চাষাবাদের পদ্ধতিতেও এসেছে পরিবর্তন। বর্তমানে গরু না থাকায় অনেক কৃষকই হাতে লাঙল ও মই টেনে জমি চাষ করছেন।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার কোনাবাড়ি এলাকার কৃষক মহর আলী খান ও শাহীন খান গরুর পরিবর্তে নিজের হাতে মই ও লাঙল টানছেন। কৃষক মহর আলী জানান, “আগে আমাদের কাছে হালের বলদ ছিল, কিন্তু এখন আর গরু পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি এবং এক বছরের খরচের কারণে গরু রাখা আমাদের জন্য অসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই হাতে লাঙল ও মই টেনে জমি চাষ করছি।”
তিনি আরও বলেন, “এক বিঘা জমি চাষ করতে গরু দিয়ে খরচ হতো প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, কিন্তু এখন এই কাজ করতে হলে পুরো খরচই নিজের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে।” তবে কষ্ট হলেও তিনি বাদাম ও অন্যান্য শস্য চাষ করছেন।
অন্যদিকে, শাহীন খান জানালেন, “আমাদের জমি বেশিরভাগ যমুনা চরাঞ্চলে, প্রতি বছর বন্যার পানি কমে গেলে চর জেগে ওঠে। সেখানে এখন গরু না রেখেও লাঙল দিয়ে জমি চাষ করছি। আর এভাবেই ৪ থেকে ৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করছি।”
এছাড়া, কৃষক আব্দুল্লাহ বলেন, “আগে গরু, লাঙল এবং মই ছিল প্রতিটি কৃষকের ঘরের অঙ্গ, কিন্তু এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই জমি চাষ করা হয়। ট্রাক্টর এবং পাওয়ার টিলার ব্যবহার বাড়ায় গরু দিয়ে চাষের প্রচলন কমে গেছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, “গরু-মহিষ এবং লাঙল-জোয়াল ছিল কৃষির ঐতিহ্য, তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কৃষকদের জন্য আরও উন্নত সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন কৃষকরা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বেশি কাজ করছেন, ফলে গরু-লাঙল দিয়ে চাষের প্রচলন কমে গেছে।”
কৃষকরা এখন পুরনো পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ফসল চাষ করছেন, তবে গরু ও হালচাষের ঐতিহ্য এখনও স্মৃতির পাতায় থেকে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।