কার্যকর লকডাউন দিতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন: সরকারকে মান্না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৯শে জুন ২০২০ ০৯:০৭ অপরাহ্ন
কার্যকর লকডাউন দিতে না পারলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন: সরকারকে মান্না

কার্যকর লকডাউন দেন এবং অসহায় মানুষদের খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদান করেন ও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেন। আর যদি না পারেন তাহলে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। সরকারকে উদ্দেশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। 

মান্না বলেন, আজকে আমরা আমাদের দাবি উত্থাপন করলাম। যদি বোধোদয় না হয়, আজকে এখানে ২০০ জন দাঁড়িয়েছি, কাল ২০০০ জন দাঁড়াব। সেদিন দেশের মানুষের অধিকার আদায় না করে ফিরব না। শুক্রবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। 'করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে এবং স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে' মানববন্ধনের আয়োজন করে নাগরিক ঐক্য।

মান্না বলেন, আমরা বলেছি এই মহামারীর মধ্যে আমরা কোনো রাজনীতি করতে চাই না। আমরা সরকার পতনের আন্দোলন করছি না, আমরা আপনাদের ক্ষমতায় থাকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি না। আমরা শুধু বলতে চাই দেশকে বাঁচাতে হবে, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। আর যদি সেটা না পারেন তাহলে এই সং সেজে সরকারে বসে থাকার কোনো অধিকার নেই।

করোনা মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা যে কতটা ভঙ্গুর তা এই মহামারীতে স্পষ্ট হয়েছে। কত মানুষ যে চিকিৎসা না পেয়ে, হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছে তার কোনো হিসাব নেই। তিন মাস পরেও সরকার করোনা শনাক্তকরণের জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারেনি। অথচ তারা গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না দেবার সব ব্যবস্থা করেছে। কথায় কথায় তারা দেশকে সিঙ্গাপুর, কানাডা, জাপানের সঙ্গে তুলনা করলেও করোনা আমাদের প্রকৃত অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এতদিন পরে এসে তারা লাল, নীল জোন ভাগ করে একটি নতুন নাটক দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। তারা পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করেছে। তাদের ভাব দেখে মনে হয় পুরো দেশে কেবলমাত্র পূর্ব রাজাবাজারই করোনা সংক্রমিত।

মান্না বলেন, শুরু থেকেই এই সরকার দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে করোনার এই বৈশ্বিক মহামারী থেকে দেশকে রক্ষার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। এত বড় একটি বিপর্যয়ের মধ্যেও তারা লুটপাট আর দুর্নীতিতে ব্যস্ত।

তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে প্রথম চীনে করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর আমরা তিন মাস সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন যদি আমরা বিমান, নৌ এবং স্থল বন্দরগুলোতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতাম তাহলে আজকের এই মহামারী পরিস্থিতি তৈরি হতো না। কিন্তু সরকার ব্যস্ত ছিল একটি বিশেষ দিবসকে উদযাপন করবার জন্য। যখন থেকে আমাদের দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে, তখনো সরকার কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। লকডাউনের পরিবর্তে তারা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে ঢাকা থেকে মানুষকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছে।

মান্না বলেন, দেশের ছয় কোটি মানুষ দিন আনে দিন খায়। অথচ সাধারণ ছুটির নামে কার্যত দেশ যখন অচল তখন এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য সরকার কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। লোক দেখানোর জন্য যেটুকু ত্রাণ বিতরণের কথা বলা হয়েছে তাও লুটপাট আর দুর্নীতির কারণে প্রকৃত অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছায়নি।

তিনি বলেন, দেশে সরকারি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স নেই, হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই। ভেন্টিলেটর নেই, অক্সিজেন সাপোর্ট নেই। মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন পত্রপত্রিকা খুললেই দেখা যায় মানুষ তিন-চারদিন ধরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে করোনা পরীক্ষা করবার জন্য চেষ্টা করছে। মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছে তার কাছে জনগণের কল্যাণের জন্য কোনো কিছু আশা করাও ঠিক না।

মান্না আরও বলেন, প্রতিদিন পোশাক শিল্পের শত শত শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। কেবলমাত্র সরকারের তোষামোদকারী গার্মেন্টস মালিকরা প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন। আর কোনো গার্মেন্টস মালিক পায়নি। শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছে না, ঈদে বোনাস দেয়া হয়নি। সামনে আরেকটি ঈদ আসছে। প্রস্তুত হোন। এই শ্রমিকরা যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামবে সেদিন পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহীদুল্লাহ কায়সার, জিন্নুর চৌধুরী দিপু, আনিসুর রহমান খসরু, কবীর হাসান, ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব ফরিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।