‘এক বছরে ই-কমার্স খাতে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ১৩ই মে ২০২০ ১০:৫৯ অপরাহ্ন
‘এক বছরে ই-কমার্স খাতে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে’

আগামী এক বছর পর ই-কমার্স, মার্কেটপ্লেস, লজিস্টিক সব সেবা মিলিয়ে এই খাতে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থানের জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি বলেন, করোনা সংকট সময়ে মানুষ জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ই-কমার্সের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী এক বছর পর ই-কমার্স, মার্কেটপ্লেস, লজিস্টিক সব সেবা মিলিয়ে এই খাতে প্রায় ৫ লাখ কর্মসংস্থানের জোরালো সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বুধবার (১৩ মে) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। করোনা সংকট সময়ে অনলাইন ব্যবসায়ের গতিপ্রবাহ ঠিক রেখে জনসাধারণকে জরুরি পণ্যসেবা পৌঁছে দিতে গৃহীত পদক্ষেপ ও ই-কমার্সের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ই-ক্যাবের উপদেষ্ঠা নাহিম রাজ্জাক এমপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, এফবিসিসিআই এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব মো. ওবায়দুল আজম, ডব্লিউটিও সেল এর পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে করোনা সংক্রান্ত সাধারণ ছুটি চলাকালীন জরুরী পণ্যসেবা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহকে ধন্যবাদ জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

সভায় ই-ক্যাবের উপদেষ্ঠা নাহিম রাজ্জাক বলেন, অনলাইন ব্যবসার গতি ডিজিটাল পেমেন্টকে ত্বরান্বিত করবে এবং আমাদের আগামী দিনের ডিজিটাল অর্থনীতির চাকা আরো গতিশীল হয়ে উঠবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের মতো সবাই নিজেদের করনীয় সম্পর্কে সচেতন হলে আমাদের লক্ষ্যপূরণ সহজ হয়ে যাবে।

একসময় বিজনেস সেক্টর পুরোটাই ই-কমার্স নির্ভর হয়ে পড়বে উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, করোনা সংকটের শুরু থেকেই ই-ক্যাবের ডাকে সাড়া দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিয়েছে অন্যদিকে জনসাধারণ ও ডেলিভারি সেবায় নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে ধাপে ধাপে অনুমতি দিয়েছে।

তাই সম্ভাবনাময় এই খাতের জন্য ঋণসুবিধা নিয়ে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসা উচিত। প্রয়োজনে তাদের ঋণ দেয়ার শর্তকে শিথিল করার আহবান জানান তিনি।

এফবিসিসিআিই এর প্রেসিডেন্ট শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ই-কমার্সের সম্ভাবনা আমাদের সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি ক্রস বর্ডার ই-কমার্সকে সহযোগিতা করে আরো বিকশিত করতে পারি তাহলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই খাত। যারা এখনো প্রচলিত পন্থায় ব্যবসা করেন তাদের ই-কমার্সে আসার সময় হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে অনেকে অনলাইন বিজনেস শুরু করেছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ই-বাণিজ্য করব নিজের ব্যবসা গড়ব’ প্রকল্পের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান জানান, এই প্রকল্পের অধীনে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ যাবত ১৪৭৫ জন তরুণকে ই-কমার্স বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাদের অনেকে নিজের ব্যবসা শুরু করেছে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এই প্রকল্প অব্যাহত থাকলে এই আরো সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে শুধু ব্যবসার কথা না ভেবে অনলাইন উদ্যোক্তাগণ নিজেদের কর্মী ও জনসাধারণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিতে নজর দিয়ে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার তার বক্তব্য বলেন, করোনা সংক্রমণ সমস্যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রসার হলেও ই-ক্যাবের ৯২ ভাগ উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। শুধুমাত্র ই-ক্যাবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কর্মী কাজ করছে। যাদের ২৬ শতাংশ নারী। ই-ক্যাবের ১১০০ সদস্য প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকার বিশাল ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। যারা আগেই পহেলা বৈশাখ ও ঈদের জন্য মালামাল ক্রয় করেছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। শুধুমাত্র অফিস ভাড়া এবং কর্মীর বেতন বাবদ মাসিক খরচের চাপ রয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা। ক্রস বর্ডার ই-কমার্স থেকে যে ১০০ কোটি টাকা বৈদিশক মুদ্রা অর্জিত হতো তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তিনি বলেন, এসব ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় সরকারের কাছে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ২৪০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য এবং ৬শ কোটি টাকা সহজ শর্তে ঋণ চাওয়া হয়েছে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ই-কমার্স সেক্টরের বর্তমান ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।

অনুষ্ঠানে চালডাল, ওয়ালটন, ইভ্যালি, ডায়বেটিক স্টোর, ফুডপান্ডা, হাংরি নাকি, এসএসএল কমার্জ ও সিন্দবাদ এর প্রতিনিধিরাসহ ই-ক্যাবের পরিচালকগণ অংশ নেন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব