রসুন ও চিনির বাজার অস্থির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:১৬ অপরাহ্ন
রসুন ও চিনির বাজার অস্থির

নিত্যপণ্যের বাজার ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে। একদিকে ঘনিয়ে আসছে রোজা, অন্যদিকে চলছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। এই দুইয়ে মিলে নিত্যপণ্যের বাজারকে ক্রমাগত অস্থির করে তুলছে। পেঁয়াজের বাজার ঠিক হতে না হতেই এবার অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে রসুন ও চিনির বাজার। ১৪০ টাকা কেজির রসুন এখন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। এদিকে ৫৫ টাকা কেজি দরের চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা থেকে ৭০ টাকায়। রাজধানীর বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়তে শুরু করেছে চিনির দাম। গত সপ্তাহে প্রতিকেজি চিনি ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে তা বেড়ে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের এই দিনে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে।

হঠাৎ করেই এ দুটি পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কাওরানবাজার কিচেন মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘মিলগেটে চিনির মূল্য বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। আমরা বেশি দামে কিনেছি বলেই কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে রোজা ও গরমের সিজন আসছে। এই সময় চিনির চাহিদা বাড়ে। তাই মূল্য আরও কিছুটা বাড়তে পারে।’

শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে চীন থেকে আমদানি করা রসুনের সরবরাহ কমে গেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে রসুন সরবরাহ হচ্ছে না। দেশি রসুনে এই চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। কাজেই মূল্য বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমদানি করা রসুনের সরবরাহ না বাড়লে মূল্য কমার কোনও সম্ভাবনা নেই। সামনে রোজার কারণেও রসুনের চাহিদা বাড়বে। কারণ, ঈদের সময় পেঁয়াজ-রসুনের চাহিদা ও মূল্য স্বাভাবিক নিয়মেই কিছুটা বাড়ে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বছরের শুরুতেই জানুয়ারির শেষদিকে চিনির মূল্য বাড়িয়ে দেয় সরকারি চিনি কলগুলো। এর লাইন ধরে বেসরকারি কোম্পানিগুলোও মূল্য বাড়াতে শুরু করে। এমন অভিযোগ করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম লালমিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) প্রধান কাজ চিনির মূল্য স্বাভাবিক রাখা। কিন্তু সংস্থাটি তা না করে জানুয়ারিতে চিনির মূল্য বাড়িয়েছে। এর পরের মাসেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে বেসরকারি কোম্পানিগুলো চিনির মূল্য বাড়িয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘উৎপাদন খরচ বেড়েছে বলেই মূল্য কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।’ এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর চিনির চাহিদা ১৫ লাখ টন। এরমধ্যে রোজার এক মাসেই প্রয়োজন হয় আড়াই লাখ টন। এছাড়া, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় গরমের সিজনে চিনির চাহিদা বেশি থাকে। তাই রোজা ও গরমের সিজন সমন্বয় করে চিনির সরবরাহ ঠিক রাখতে সম্প্রতি এক লাখ টন চিনি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন।’

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্যমতে, গত এক বছরে দেশি রসুনের মূল্য বেড়েছে ১৯১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর আমদানি করা রসুনের মূল্য বেড়েছে ১৬০ শতাংশ। তবে গত এক মাসের ব্যবধানে আমদানি করা রসুনের মূল্য বেড়েছে ৮৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।

শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে আমদানি করা রসুনের ৯৬ শতাংশই আসে চীন থেকে। করোনার কারণে প্রায় এক মাসেরও কিছুটা বেশি সময় ধরে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ এক ধরনের বন্ধ থাকায় সেখান থেকে রসুন আসছে না। বিকল্প হিসেবে বর্তমানে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অল্প পরিমাণ রসুন আমদানি হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, রোজার সময় নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের উদ্যোগই নেওয়া হচ্ছে। এ সময় কেউ যেন বাজার অস্থির করতে না পারে, সেজন্য বাজার মনিটরিং চলছে। রোজার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে। তবে রসুনের বিষয়টি আলাদা। চীনের বিকল্প হিসেবে আর কোথা থেকে রসুন আমদানি করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানিয়েছে, চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই ছয় মাসে মোট ৫২ হাজার ৪৬১ টন রসুন আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে ৯৬ শতাংশই এসেছে চীন থেকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতিবছর রসুনের চাহিদা প্রায় ৬ লাখ টন। এরমধ্যে ১৩-২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বাকি রসুন দেশেই উৎপাদন হয়। ট্যারিফ কমিশনের হিসেবে, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) দেশে রসুন উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ১৩ হাজার টন। সেখান থেকে পচে যাওয়া রসুন বাদ দিয়ে প্রকৃত উৎপাদন ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২২ হাজার টন। তবে বিবিএসের হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রসুনের উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ৬৬ হাজার টন।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব