একজন স্বপ্নবাজ সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ২৫শে অক্টোবর ২০২০ ০৯:৫৪ অপরাহ্ন
একজন স্বপ্নবাজ সফল ফ্রিল্যান্সারের গল্প

সিলেটের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে কাশিম উদ্দিন মাসুম। বেড়ে ওঠা সিলেটের এমন একটি গ্রামে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিলো না বললেই চলে। এমন একটি সময় তিনি পার করেছেন যখন স্বপ্ন দেখতেন কাগজের কম্পিউটার নিয়ে আর এখন লাখ টাকার কম্পিউটার তিনি ব্যবহার করেন। যেখানে শুধু মাসিক ইন্টারনেট বিলই ১৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম "সফল ফ্রিল্যান্সার" এর প্রতিষ্ঠাতা কাশিম উদ্দিন মাছুমের কথাই বলছি, যিনি একসময় কাগজের কম্পিউটার নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন। এখন হাজারো তরুণ/তরুণীদের পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর বাস্তব কারিগর।

মাসুম বলেন,সপ্তম শ্রেণীতে থাকাকালীন টেকটিউনস সম্পর্কে জানতে পারি, সেখান থেকেই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারণা পাই। আমাকে দিকনির্দেশনা দেবে আশেপাশে এমন কাউকেই পাইনি তবে নিজের মতো করে আমার গবেষণা চালিয়ে যাই, প্রথম ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানার পর থেকে আমি এটার প্রতি খুবই আগ্রহপ্রবণ হই এবং টানা দুই বছর ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে গবেষণা করি। গবেষণায় সফলতা পাই আমি যখন ৯ম শ্রেণীতে পড়ি এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের জগতে তখন থেকেই কাজ শুরু করি। ২০১৩ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি, ১৬ সালে এসে ৬ ডিজিটে প্রবেশ করি এবং ১৭ সালে কাতার চলে যাই, ১৮/১৯ সালে প্ল্যান করি আর ২০ সালে এসে আমার কাছে ৩ টি অপশন ছিলো
১ঃ নিজে নিজের ফ্রিল্যান্সিং কাজ গুলোতে সময় দেওয়া যেটা করলে কেবল একাই আমি সফল হতাম!
২ঃ নিজের চাকরির পাশাপাশি পার্টটাইম কিছু করা
৩ঃ একটি কমিউনিটি তৈরি করা
জন্মের পর থেকে মানুষ এর খুশিতে অংশ নেওয়া আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়, তাই বেছে নিয়েছিলাম অপশন ৩! অর্থাৎ তৈরি করলাম সফল ফ্রিল্যান্সার - Sofol Freelancer কমিউনিটি, যেখানে মানুষের সফলতায় পাশে থাকাই লক্ষ্য ছিলো! জানিনা এই চ্যালেঞ্জে কতটা সফল তবে আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া কেননা মাত্র ৯ মাসেই ১ লাখ এর অধিক মানুষ এর কাছে পৌছাইতে পেরেছি। সফল ফ্রিল্যান্সার একটি ব্রান্ড এখন, এখন ব্র‍্যান্ডটা তৈরি করা সহজ ছিলো না! আমাকে ২/৩ মাস রাতে মাত্র ৩/৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে কাজ করতে হয়েছে।

তিনি আরো জানান, এই সফল ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটি থেকে ফ্রি কোর্স দেয়া হয়। কারণ অনেকের স্বপ্ন /ইচ্ছে শক্তি থাকা সত্ত্বেও টাকার অভাবে পারে নাহ, তিনি চান নাহ টাকার জন্য কোন তরুণ এর স্বপ্ন নষ্ট হোক।
মাসুম আরো জানান, এই পর্যন্ত সফল ফ্রিল্যান্সার পরিবারের সাথে যুক্ত হয়েছেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষ।

অনেকের আস্থার জায়গা, ভালবাসার জায়গা হয়ে উঠেছে এখন সফল ফ্রিল্যান্সার। ভালো করতে হলে ফ্রিল্যান্সারদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট অর্থাৎ শিখার কোনো বিকল্প নেই। শেখার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, কাজ ভালো জানলে এবং দক্ষতা রাখেন মার্কেট প্লেসে কাজ পাওয়া কঠিন নয়! এবং সেই কাজের পারিশ্রমিকও ভালো। ফ্রিল্যান্সিং জগতে নতুন যারা আসে কাজ শেখার দিকে অর্থাৎ স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর দিকে নজর দেয় কম, তাদের কাজ শেখার প্রতি আরও মনযোগ দেওয়ার পরার্মশ এই সফল ফ্রিল্যান্সারের। ২০১৯ সালের পরিকল্পনা করে এই বছরের মধ্যে মানুষকে বিনামূল্যে ফ্রিল্যান্সিংয়ের দিকনির্দেশনা দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং উপর ৩হাজারের বেশী মানুষকে সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করেছেন বলে জানান ‘সফল ফ্রিল্যান্সারের প্রতিষ্ঠাতা কাশিম উদ্দিন মাসুম’। সিলেটের এই বাসিন্দা বর্তমানে কাতারের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন, এর পাশাপাশি সফল ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত, এছাড়াও যুক্ত রয়েছেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে।

তিনি বলেন, যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে সকল বাধা অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। কর্মে বাধা বিপত্তি আসবেই, তাই বলে হতাশ হয়ে সঠিক পথ কখনো ত্যাগ করা উচিৎ নয়। কর্মস্থলে কে কী বললো না বললো তা নিয়ে না ভেবে নিজের কাজে মননিবেশ করুন।