করোনা:বাসায় কিভাবে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২৩শে জুন ২০২০ ০৮:১৬ অপরাহ্ন
করোনা:বাসায় কিভাবে সময় কাটাচ্ছে শিক্ষার্থীরা?

করোনার লকডাউনের সাথে সাথে থেমে গেছে জীবনের সব ব্যাস্ততা।জনজীবনে পড়েছে করোনার প্রভাব।বাংলাদেশে সকল কিছু আস্তে আস্তে খুলে দিলেও কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর কোন সঠিক দিনক্ষন জানা  নেই শিক্ষার্থীদের।শিক্ষাজীবনে এমন অনির্দিষ্ট বন্ধ নিয়ে বিপাকে আছে অনেক শিক্ষার্থী।তাদের মতামত শেয়ার করেছে আমাদের সাথে।

রাইয়ান তাসনিম ফারিন,আনন্দমোহন কলেজ :- লকডাউন  নিয়ে বিড়াম্বনার শেষ নেই-আজ এটা লাগবে কাল ওটা ত লেগেই আছে কিছু না কিছু চাহিদা- কিন্তু পরিবারের সাথে যে চিহিদা সেটা লকডাউন না হলে হয়ত অনেকেই বুঝত না।  লকডাউন কেড়ে নিয়েছি বাইরের জগৎ কিন্তু দিয়েছে এক সাথে ছাদে গাছ লাগানো, ঘরে বসে এক সাথে ইন্ডোর গেইম,বই পড়া  আরো অনেক কিছু। যা লকডাউন না থাকলে বুঝতাম না ফ্যামিলির সাথে কাটানো সময় গুলা কি আনন্দের!না  পাওয়ার মাঝেও যেনো, সব কিছু পেয়ে  ভালোই আছি।সব কিছুর হয়ত পজেটিভ  আর নেগেটিভ দিক থাকে বোধ হয় লকডাউন এর এটা পজিটিভ দিক!! আপাত দৃষ্টকোণ থেকে লকডাউন এর কাছে সবাই কৃত্তজ্ঞ কর্মস্থলের ব্যস্ততা থেকে পরিবারের সাথে সময় করে দেওয়ার জন্য!

মোঃ মাহফুজ খান,ঢাকা কলেজ:- ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে যখন বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল গুলো বন্ধ করে দেয়া হল তখন আমাদের মাঝে কিছুটা আনন্দ কাজ করছিল। কারণ আমরা বাড়িতে যাওয়ার একটা সময় পেয়েছি। কিন্তু ক্রমে ক্রমে যখন লকডাউন এর সময় বাড়তে থাকে, তখন আমাদের মাঝে একধরনের বিরক্ততা  কাজ করতে থাকে। যখনই একটু বাড়ির বাইরে যেতে চাই, ঠিক তখনই বিশ্ব বিভীষিকার দৃশ্য চোখে ভেষে উঠে। তবে কি আর বসে বসে সময় পার করা যায়? তাই আমাদের পরম বন্ধু বইকে নিয়ে বসে পরলাম। অবসর সময় আমি বই দিয়েই পার করব। পড়া শুরু করে দিলাম বিভিন্ন উপন্যাস, গল্প, নাটক ইত্যাদি। তথ্য ও প্রযুক্তির এই যুগে আবার কেন'ই বা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকব? শুরু করে দিলাম বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কোর্সসমূহ। এভাবেই আমার অবসর সময়কে ব্যস্ত করে রাখছি।

সানোয়ার ইসলাম আদি,ঢাকা কলেজ:-করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গোটা বিশ্ব এখন স্থবির হয়ে গিয়েছে। গত তিন মাস ধরে গৃহবন্দী হয়ে দিনপার করছি।প্রথম দিকে এই বন্ধ টা খুব ভালো লাগলেও এখন দিন দিন এই বন্ধটা বিরক্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। সারা দিন শুয়ে বসে গান আর মুভি দেখেই কাটাচ্ছিলাম। তবে এই একঘেয়েমি ভাব কাটাতে বিভিন্ন ফিকশন, নন-ফিকশন বইয়ের পিডিএফ নামিয়ে পড়া, সাথে একাডেমিক বই পড়া, বিভিন্ন হাদিস কালামের বই পড়ছি, বিখ্যাত মুনি ঋষিদের জীবনী পড়ছি। সেইসাথে সমাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিবেশীদের খোঁজ খবর নেওয়ার চেস্টা করি।এভাবে অনির্দিষ্ট অবসরের দিনগুলো এখন বেশ উপভোগ করছি। বাড়িতে থেকে নিজেকে নিজের পরিবারকে সময় দিতে পারছি পরিবারকে ঠিক ভাবে বুঝতে পারছি। 


হানিফ মুক্তাদির,সরকারী তিতুমীর কলেজ:- "স্তব্ধ রাত্রি ব্যস্ত বেলা দুর্গম পথে আটল ছুটে চলা"
ছাত্র জীবন এমনটাই হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু সবকিছু তো নিয়মমতো চলে না।তাই আজ সবাই এই সকল নিয়ম ভেঙ্গে উন্মত্ব হয়ে ছুটে চলার নামান্তর ঘরকোনা হয়েই দিন যাপন করতে হচ্ছে আমাদের। এই ব্যস্ত  জগতকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে এই ক্ষুদ্র পরজীবির কাছে আমরা আজ নত।এসাইনমেন্ট আর পড়াশোনার চাপে যে রাত পোহাতাম ক্ষনিকের, আর ঝি ঝি পোকার শব্দে তা বড় বোধ হয়। শহড়ের ব্যস্ততা,  সকালের বাস ধরা সবই কেমন জানি স্তব্ধ। হৃদয়ের কোনে বেজে উঠে বিদ্রোহী কবির কবিতা-

"থাকবো না কো বদ্ধ ঘরে
দেখবো এবার জগতটাকে"
আজ কবি বেচে থাকলে হয়তো বলতেন,
'ওহে তরুন
অবস্থান করো আপন আলয়ে
ঘর কভু কারা নয় আপনার স্বর্গ 
তোমার ঐ কুঠরি এ যুদ্ধের দূর্গ'।

শিক্ষাজীবনের এমন দিন কেটে গিয়ে সুস্থ হয়ে উঠুক এই পৃথিবী।পৃথিবীর সকল কিছু হয়ে উঠুক স্বাভাবিক শিক্ষাথীরাও ফিরে পাক তাদের শিক্ষার পূর্ণাঙ্গ ছোয়া।সকল ক্যাম্পাসের টিএসসিতে আবারো কথা জমে উঠুক চায়ের কাপের আড্ডায়।একটি নতুন সুন্দর সকালের অপেক্ষায় আমরা।