পদ্মফুলের মতো শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল, নির্মাণে লাগবে ৪ বছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শনিবার ২৮শে ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:০০ পূর্বাহ্ন
পদ্মফুলের মতো শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল, নির্মাণে লাগবে ৪ বছর

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন করবেন। টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শেষ হতে সময় লাগবে ৪ বছর। নতুন এই টার্মিনাল দেখতে হবে পদ্মফুলের মতো। টার্মিনালের মূল ভবনের কলাম, সিলিংসহ বিভিন্ন স্থানের ডিজাইনেও পদ্মফুলের নকশা থাকবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তৃতীয় টার্মিনালের ভবন হবে তিনতলা। ভবনটির আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রী ধারণে সক্ষম। এটি নির্মিত হলে এই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে মোট ২ কোটি যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। এ ভবনটির নকশা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি রোহানী বাহারীন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। রোহানী বাহারীন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নকশা করেছেন।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের যাত্রী যে হারে বাড়ছে, তাতে তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি খুবই জরুরি। বর্তমান টার্মিনালের ক্যাপাসিটি বছরে মাত্র ৮০ লাখ যাত্রী। একইসঙ্গে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮ শতাংশ গ্রোথ হচ্ছে। টার্মিনালটির হবে অটোমেটেড।’

এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)-এর মাধ্যমে জাপানি কোম্পানি মিতসুবিশি, ফুজিটা ও কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং—এই তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ করবে। টার্মিনালটির কাজ শেষ হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশের বিমান সংস্থার বিমানের এ বিমানবন্দর দিয়ে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি  বোডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া, অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে।

তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রীদের দ্রুত সেবা দিতে গ্রাউন্ড সেবায়ও আসবে পরিবর্তন। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে বিমান ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনানের নির্মাণকাজ শুরু করতে আমাদের বেশ কিছু বাধা পেরিয়ে আসতে হয়েছে। টার্মিনালটি এমন একটি ম্যাকানিজমে নিয়ে আসা হচ্ছে, যেন কেন্দ্রীয়ভাবে এর প্রতিটি কাজ মনিটরিং করা যায়। নতুন টার্মিনাল হলে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজের জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করা হবে। যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোনও প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে।

শুধু টার্মিনাল ভবনই নয়, আমদানি-রফতানি কার্গো ভিলেজেরও আধুনিকায়ন করা হবে। ৩৫ হাজার ৮৬৩ বর্গমিটার আয়তনের আমদানি কার্গো ভিলেজ ও ২৭ হাজার ১৪৪ বর্গমিটার আয়তনের রফতানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ এবং উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগের ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবার সুবিধাও রাখা হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘এই টার্মিনাল নির্মাণ সমাপ্তির পর তা হবে সবার প্রত্যাশার একটি সুন্দর ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দর।’ আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে এই টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ইনিউজ৭১/জিয়া