ঈদ অর্থ খুশী,আনন্দ ও উদযাপন। ঈদ অর্থ বারবার ফিরে আসা। সমগ্র মুসলিম উম্মাহের জন্য বছরে দু'টি দিন খুবই আনন্দের। একটি হলো রোজার ঈদ তথা ঈদুল ফিতর আর একটি হলো ঈদুল আযহা। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘প্রতিটি জাতির উৎসব আছে, আমাদের উৎসব হলো এই দুই ঈদ’ (মুসলিম, তিরমিজি)। মুসলমানদের ধর্মীয় দুটি উৎসব—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো, চাঁদ দেখে রোজা ছাড়ো, ইফতার করো বা ঈদ করো।’ যে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ দেখা যায়, সে রাত হলো ‘চাঁদরাত’। আরবি চান্দ্র বছরের নবম মাস রমজান এবং দশম মাস শাওয়াল। ইসলামে যে রাতগুলো ইবাদতের জন্য এবং ফজিলতে পরিপূর্ণ, সেসবের অন্যতম এই ঈদের রাত।
চাঁদ দেখলে বা চাঁদ দেখার সংবাদ নিশ্চিত হলে দোয়া পড়া। ‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমান, ওয়াছ ছালামাতি ওয়াল ইসলাম; রব্বি ওয়া রব্বুকাল্লাহ। হিলালু রুশদিন ওয়া খায়র।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই মাসকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ইমান, প্রশান্তি ও ইসলাম সহযোগে আনয়ন করুন; আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। এই মাস সুপথ ও কল্যাণের।’ (তিরমিজি: ৩৪৫১, মুসনাদে আহমাদ: ১৪০০, রিয়াদুস সালেহিন: ১২৩৬)। এর পাশাপাশি রসূল (সাঃ) এর একটি সূন্নাহ এসেছে,যেটি হাদীস দ্বারা প্রমানিত, যেমনঃ আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এবং আরো একাদিক সাহাবী ঈদের চাঁদ দেখার পর রাস্তায়, ঘরে,বাজারে সব জায়গায় তাকবীর দিতেন,তাদের দেখা দেখি সকলে তাকবীর দিতো।চারদিকে আলোকিত গুনরঞ্জন সৃস্টি হতো, এ তাকবীরটি ঈদের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকবে।“আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা আল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ”এ তাকবীরের ব্যাপারে সূরা বাক্বারার ১৮৬ নং আয়াতেও উল্লেখ আছে,এ তাকবীরটি হচ্ছে মাসনূন ইবাদত।
হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত জাগবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। যেদিন (হাশরের দিন) সবার অন্তর মারা যাবে, সেদিন তার অন্তর জিন্দা থাকবে।
হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ রাত জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। সেই পাঁচটি রাত হলো-
১. জিলহজ মাসের আট তারিখ রাত ২.জিলহজ মাসের নয় তারিখ রাত ৩.ঈদুল আজহার রাত ৪.ঈদুল ফিতরের রাত ৫. শা'বান মাসের ১৫ তারিখ রাত। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণনা করেন : যখন ঈদ-উল-ফিতরের রাতের আগমন হয় ওই রাতকে পুরস্কার দানের রজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়। যখন ঈদের সকাল নামে তখন আল্লাহ প্রতিটি দেশে ফেরেস্তা প্রেরণ করেন। তারা পথের ধারে অবস্থান নেন এবং ডাকতে থাকেন। তাদের আহ্বান মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত সব মাখলুকই শুনতে পায়। তারা বলেন : ওহে উম্মতে মুহাম্মদী (স:)! বের হয়ে এসো মর্যাদাবান প্রতিপালকের পানে। তিনি অধিক পরিমাণে দান করে থাকেন, মারাত্মক অপরাধও ক্ষমা করে দেন।
শাওয়ালের চাঁদরাত, তথা রমজানের ঈদের রাতের আমল হলো: পুরুষদের মাগরিব, এশা ও ফজর নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে পড়ার চেষ্টা করা এবং নারীদের আউওয়াল ওয়াক্তে ফরজ নামাজ আদায় করা। রাতের ইবাদতের জন্য বিশেষভাবে পবিত্রতা অর্জন করা; সম্ভব হলে গোসল করা। ইবাদতের উপযোগী ভালো কাপড় পরিধান করা। মাগরিবের পর আউওয়াবিন নামাজ পড়া এবং শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া। রাত জেগে নফল ইবাদত করা। নফল নামাজ পড়া। তাহ্যিয়াতুল অজু, দুখুলুল মাসজিদ, তাওবার নামাজ, সলাতুল হাজাত, সলাতুত তাসবিহ, সলাতুশ শোকর ইত্যাদি পড়া। কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, সূরারা ইয়াসিন, সুরা রহমান, সুরা ওয়াকিআ, সুরা মুলক, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা ফাতহ, সুরা নাবা ইত্যাদি পাঠ করা। দরুদ শরিফ পাঠ করা, ইস্তিগফার করা, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদিতে মশগুল থাকা।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা এসব রাত গুলোর ফজিলত না জানার কারনে এর নিয়মত থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হই।বেশীরভাগ ক্ষেত্রে আমরা মা বোনেরা ঈদের দিনের রসনার আয়োজন নিয়ে রাত পার করে দেই, যুবক যুবতীরা চাঁদ রাতের শেষ কেনার নামে জুয়েলারী,কসমেটিকস, জুতা, ব্যাগ পারফিউম কেনা সহ মেহেদী উৎসবে মেতে উঠে।অনেক ক্ষেত্রে আমরা নিজেরাও এ রাত সমূহের মহত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকার কারনে নিজেরা আমাদের সন্তানদের বুঝাতে সক্ষম হইনা।আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা আমাদের সঠিক দ্বীনের পথ দেখান ও এই সকল মর্যাদাপূর্ণ বরকতময় রাতগুলোতে বেশী বেশী ইবাদত ও সঠিক আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।
শিল্পী আকতার, সহকারী শিক্ষক, সেনানিবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।