তারাবির গুরুত্ব ও ফজিলত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: শুক্রবার ২২শে মে ২০২০ ১০:০৫ পূর্বাহ্ন
তারাবির গুরুত্ব ও ফজিলত

তারাবি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ নামাজ, যার দ্বারা বান্দার জীবনের গুনাহ ক্ষমা করা হয়। রমজানের পরিপূর্ণ মাগফিরাত ও ক্ষমা লাভ করতে হলে রোজা ও তারাবি উভয় আমলই করতে হবে।

রোজার প্রতি উৎসাহিত করতে গিয়ে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানসহকারে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা রাখে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ বুখারি। রোজার পাশাপাশি তারাবির প্রতি উৎসাহিত করে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘যে রমজানের রাতে ইমানের সঙ্গে নেকির আশায় দন্ডায়মান হয় তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ মুসলিম।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের এক রাতে মসজিদে তারাবি পড়লেন। সাহাবিরাও তার সঙ্গে জামাতে শামিল হলেন। দ্বিতীয় রাতে মুকতাদির সংখ্যা আরও বেড়ে গেল। এরপর তৃতীয় বা চতুর্থ রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবির জন্য মসজিদে এলেন না। ফজরের পর সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, আমি তোমাদের আগ্রহ ও উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি, কিন্তু এ নামাজ তোমাদের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আমি তোমাদের কাছে আসিনি। মুসলিম।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করতেন এবং এরপর ৩ রাকাত বিতরের নামাজও আদায় করতেন।’ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ রাকাত তারাবি নামাজের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতের সময়। এর ওপর খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবা, তাবেইন, তাবে-তাবেইন, সালফে সালেহিন সবাই ঐকমত্যে আমল করেছেন এবং চার মাজহাবের ইমামরাও এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

হজরত সাইব ইবনে ইয়াজিদ (রা.) বলেন, ‘খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে রমজানে মুসলমানরা ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়তেন।’ বায়হাকি। ইমাম নববী (রহ.) এ বর্ণনাকে সহি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল খুলাসাতুল আহকাম। ইয়াজিদ ইবনে রুমান বলেছেন, ‘খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনামলে মুসলমানরা রমজানের প্রতি রাতে ২০ রাকাত তারাবি ও ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন।’ মুয়াত্তা মালিক। হজরত আবদুল আজিজ বিন রাফি বলেন, ‘হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) মদিনায় রমজানে ২০ রাকাত তারাবি নামাজের জামাতে ইমামতি করতেন।’ মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা।

ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) এ স¤পর্কে বলেন, ‘হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে সাহাবায়ে কিরামের জামাতে ২০ রাকাত তারাবি ও ৩ রাকাত বিতরের নামাজে ইমামতি করতেন।’ মজমুয়ায়ে ফাতাওয়া। হজরত ওমর (রা.), হজরত উসমান (রা.) ও হজরত আলী (রা.)-এর শাসনামলে ২০ রাকাত তারাবিই পড়া হতো।

তাদের নিরবচ্ছিন্ন আমল ও ইজমার আলোকেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ। এ আমলই পুরো পৃথিবীতে এখনো চালু রয়েছে। আজও বায়তুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবিই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অতএব রমজানুল মুবারকের পরিপূর্ণ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করতে হলে রোজার পাশাপাশি তারাবির নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাওফিক দিন।